অবশেষে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো। তবে দীর্ঘ দিন ধরে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন মহল থেকে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করা হচ্ছিল।
অবশেষে এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হলো। আজ দুপুরে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনি মতামত পাঠানোর পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং তাদের সংশ্লিষ্ট সব সংগঠন আর এই নামে রাজনীতি করতে পারবে না।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগ করে আসছিলেন সরকারের মন্ত্রীরা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন ওই জোটের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সেই বৈঠক হয়। জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হলো।
আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু কয়েক বছর আগে সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হলেও পরে সে বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি।
এর আগে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আইনি মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। এর আগে, সচিবালয়ে নিজ দপ্তরের এক ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির এবং তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যেসব কর্মী ১৯৭১ সালের পর জন্ম নিয়েছেন তাদের গণহারে বিচার করা হবে না।
এ সময় মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধের পর একজনকে আদালত ছাড়া অপরাধী হিসেবে শাস্তি দিতে পারে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে আইনের কথা বলছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, সেখানেও আমরা সংশোধনের ব্যবস্থা করেছি। এই নিষিদ্ধ করার পরেও তাকে সাজা দেওয়া যাবে না এমনটি না। তবে নিষিদ্ধ যেহেতু হয়ে গেছে, সেহেতু নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সাজার মধ্যে আসবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের সদস্যরা এই দলের অধীনে রাজনীতি করতে পারবে না। তারা যদি বাংলাদেশের কোনো আইনে অপরাধ করে থাকে, অবশ্যই তাদের বিচার হবে। কিন্তু এটা যদি বলেন, গণহারে জামায়াতের যারা নতুন কর্মী যারা ১৯৭১ সালের পর জন্ম নিয়েছে, তাদের বিচার করা হবে না।
জামায়াত আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে পারে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে পারে। আন্ডারগ্রাউন্ডে অনেক দল গেছে। অনেক দল যেতে পারে আন্ডারগ্রাউন্ডে। কিন্তু আমি বলেছি, সেটিকে মোকাবিলার প্রস্তুতি আমাদের আছে।