পুঁজিবাজারের ৫ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছে আওয়ামীলীগ পন্থীরা
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জোর করে দখলে নেওয়া পুঁজিবাজারের ৫ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছে। গত তিনদিনে এসব ব্যাংকে আওয়ামী পন্থীদের মদদপুষ্ঠবেশ কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করে ব্যাংক ছেড়ে চলে গেছেন। অন্যদিকে, আওয়ামীপন্থীদের জবরদখল করা ব্যাংকগুলো আগের মালিকরা ও তাদের প্রতিনিধিরা নিয়ন্ত্রণ লাভের তোড়জোড় শুরু করেছেন। ব্যাংকগুলো হলো: ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক-এসআইবিএল, ইউসিবি, ন্যাশনাল ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংক: মুলত শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরের দিন গত ৬ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যাংকটির সিবিএর শীর্ষ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেছেন, ২০১৭ সালের পরে যত এক্সিকিউটিভ এসেছেন, তারা আর এই ব্যাংকে ঢুকতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের পর থেকে সকল অবৈধ পরীক্ষাবিহীন নিয়োগ বাতিল করা হবে। একইসঙ্গে এই সময় যাদের অবৈধভাবে চাকরি বাতিল করা হয়েছে তাদের চাকরি পুনরায় দেয়া হবে। এরমধ্যে ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী পদত্যাগ করেছেন।
এসআইবিএল: ২০১৭ সালে শরীয়াভিত্তিক পরিচালিত এসআইবিএল-এর মালিকানা নেয় এস আলম গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সব পরিচালককে তুলে নিয়ে এই ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার ওই সময়কার চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ডা. রেজাউল হক, তখনকার অন্যতম পরিচালক আনিসুল হকসহ কয়েকজন পরিচালক ব্যাংকে যান।
তারা ব্যাংকে গিয়ে বোর্ডরুম ও চেয়ারম্যানের জন্য নির্ধারিত কক্ষে গিয়ে বসে পড়েন। এই সময় অনেক কর্মকর্তা সেখানে জড়ো হয়ে ব্যাংকটি ‘এস আলমমুক্ত’ করার দাবি তোলেন। উপস্থিত আন্দোলনকারীদের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হন এস আলম গ্রুপের আস্থাভাজন, ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুল হান্নান খান ও মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। অবশ্য পরিচালনা পর্ষদের সবাই পলাতক থাকায় তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইউসিবিএল: ২০১৭ সালে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরি জাবেদের পরিবার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক-ইউসিবির পর্ষদ থেকে পারটেক্স গ্রুপের সবাইকে সরিয়ে কর্তৃত্ব নেয়। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডারদের ব্যানারে সাইফুজ্জামান চৌধুরি জাবেদ ও তার পরিবারের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় অবৈধভাবে লন্ডনে ইউসিবি ব্যাংকের ১২ হাজার কোটি টাকা পাচারকারী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও পরিবার থেকে ইউসিবি ব্যাংকের মুক্তি ও তাদের শাস্তি দাবি করা হয়।
ন্যাশনাল ব্যাংক: কয়েক মাস আগে এসআলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যায় ন্যাশনাল ব্যাংক। হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির মালিকানা বদলের তোড়জোড় চলছে। বর্তমানে ব্যাংকটি চেয়ারম্যান এবং পরিচালকরা পালিয়ে রয়েছেন।
আইএফআইসি: ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা সরকারের বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা পুঁজিবাজারের ‘দরবেশ’ খ্যাত সালমান এফ রহমান। তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতে পালিয়ে গেছেন। সরকারের ৩২.৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকা ব্যাংকটিতে বর্তমানে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংকটি সালমানের রাহুগ্রাসমুক্ত করার দাবি তুলেছেন।