মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘ আড়াই যাবত পতনের বৃত্তে ঘুরফাক খাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। এখন তলানির সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর থেকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। এরইমধ্যে অনেক নিস্কিয় বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে ফিরতে শুরু করছেন। অনেকে আবার নতুন করে বিনিয়োগ করতে শুরু করছেন। ফলে গত সাত কার্যদিবসে পৌনে ছয় হাজার নতুন বিনিয়োগকারী যুক্ত হয়েছেন। পাশাপাশি নিস্কিয় বিনিয়োগকারীদেরও অনেকে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। গত তিন কার্যদিবসে প্রায় ছয় হাজার বিনিয়োগকারী বাজারে সক্রিয় হয়েছেন।

পুঁজিবাজারের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত দিনে শেয়ারবাজারে নতুন বিও হিসাব খোলা হয়েছে ৫ হাজার ৬৪৭টি। আর তিন কার্যদিবসে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবগুলোর মধ্য থেকে ৫ হাজার ৯৭৮টি সক্রিয় হয়েছে।

১১ আগস্ট শেয়ারবাজারে শেয়ার আছে এমন সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৮৮ হাজার ২৯৪। ১৪ আগস্ট লেনদেন শেষে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯৪ হাজার ২৭২। নিষ্ক্রিয় বিও হিসাব সক্রিয় হতে শুরু করায় শেয়ারবাজারে শেয়ারশূন্য অর্থাৎ শেয়ার নেই এমন বিও হিসাবের সংখ্যা কমছে।

সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, ১১ আগস্ট বাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫২৩। ১৪ আগস্ট এই সংখ্যা কমে হয় ৩ লাখ ১৪ হাজার ১৭৬। সেই হিসাবে তিন কার্যদিবসে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪ হাজার ৩৪৭।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, সূচক টানা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ করে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বেশি সক্রিয় হয়েছেন। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও বাড়তে শুরু করেছে। কারণ, কয়েক বছর ধরে বাজারে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারগুলো অবমূল্যায়িত অবস্থায় ছিল। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব শেয়ার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তাতে বাজারের প্রতি ব্যক্তিশ্রেণির ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউআইইউ) বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মূসা বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের আশার সঞ্চার হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এত দিন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছিল; তাই বাজারমুখী হননি অনেকে।

তবে অন্তর্র্বতী সরকারের হাত ধরে নতুন বেশকিছু সংস্কার হবে এবং সুফল মিলবে বাজারে, এমন আশায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে যেসব সংকট রয়েছে, সেগুলো শিগগিরই দূর হবে না। তাই কিছু সমস্যা থাকলেও বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হওয়ায় বাজারের বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী ধারা কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে আমার ধারণা।