পুঁজিবাজার খুব দ্রুত সময়ে ঘুরে দাঁড়াবো, হতাশ হওয়ার কিছু নেই
তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর থেকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। পুঁজিবাজারে আবারও সুদিন ফিরে আসবে এই আশায় বুক বাধছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে গত কয়েক কার্যদিবস টানা দরপতনে ফের অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজারের গতিবিধি নিয়ে নতুন করে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা। তবে বিএসইসিতে নেতৃত্বশূন্যতায় দোটানায় পড়ছেন বিনিয়োগকারী। যেহেতু নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান বিএসইসি নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ে বাজার ঘুরে দাঁড়াবো। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেতৃত্বশূন্যতার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের অনিশ্চয়তা ভর করেছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করছেন। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যেসব বিনিয়োগকারী বাজারে সক্রিয় হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে মুনাফা তুলে নিয়ে আবারও সাইডলাইনে চলে গেছেন। এ কারণে বাজারে বিক্রির চাপ বাড়লেও সেই তুলনায় ক্রেতা কম।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর থেকে গত ৬ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৪ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৭৮৬ পয়েন্ট। পরবর্তী ৫ কার্যদিবস উত্থান-পতনের মধ্যে চলে পুঁজিবাজারের লেনদেন। তবে এর পর হঠাৎ করে উত্থান ও হঠাৎ করে দরপতন দেখা যাচ্ছে। তবে ক্ষমতার পট-পরিবর্তনের পর যে কয়দিন সূচকের পতন হয়েছে তার মধ্যে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের বড় দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। আজ ডিএসইর সূচকের পতন হয়েছে ১২৫ পয়েন্টের বেশি। এদিন লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর কমেছে। বিপরীতে দর বেড়েছে মাত্র ১৮টির। যা আগের পতনের দিনগুলোতে এমন দৈন্যদশা দেখা যায়নি। এ অস্বাভাবিক দরপতনের পেছনে যুক্তিসংগত কোন কারণ খুঁজে পাননি বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তাঁরা বলছেন, প্রবাসীরা আমাদের রেমিট্যান্সের বড় সুখবর দিচ্ছেন। পোশাক খাতেও স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে। প্রশাসনিক পর্যায়েও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরছে। এমন অবস্থায় পুঁজিবাজারে বড় পতনের যৌক্তিক কোন কারণ তাঁরা দেখতে পারছেন না। তারা বলেন, এটা বড় বিনিয়োগকারীদের কারসাজি। তারা মাঝে মাঝেই বড় ঝাঁকুনি দিয়ে শেয়ার সংগ্রহ করে। এখনও তাই করছে। তবে এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। তারা যেন কম দরে শেয়ার ছেড়ে না দেন। কারণ বাজার যেকোন সময় বড় আকারে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, বাজারে নতুন বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ব্যক্তি শ্রেণির উচ্চ সম্পদশালী বিনিয়োগকারীরা কিছুটা দোটানায় পড়েছেন। বিএসইসি পুনর্গঠন ছাড়া এ পরিস্থিতির অবসান হবে বলে মনে হচ্ছে না। এ কারণে বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তবে বাজার নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। বাজার খুব দ্রুত সময়ে ঘুরে দাঁড়াবো।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১২৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৪০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৫২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ১২৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৮কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮ টির, দর কমেছে ৩৬৬ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪ টির।
ডিএসইতে ৪৮০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৯৯৯ কোটি ১ লাখ টাকার। অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩১৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭১৫ পয়েন্টে। সিএসইতে ২২৪ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫ টির দর বেড়েছে, কমেছে ২০০ টির এবং ৯ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।