শেয়ার বিক্রির চাপে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না পুঁজিবাজার, নেপথ্যে আস্থা সংকট
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর থেকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। পুঁজিবাজারে আবারও সুদিন ফিরে আসবে এই আশায় বুক বাধছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম চার কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছিল ৭৮৬ পয়েন্ট। এতে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে স্বপ্ন বুনতেও শুরু করেছিল। তবে গত কয়েক কার্যদিবস টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের সে আশায় গুড়োবালি। কারণ ২০২২ সালের শুরু থেকে দেশের পুঁজিবাজার টানা দরপতনের বৃত্তে বন্দী। দীর্ঘে আড়াই বছরের বেশি সময়ে বাজার থেমে থেমে কেবল পতনের ধারায় ছিল। বার বার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার। ফলে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষেণে দেখা যায়, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৭ হাজার ১০৫ পয়েন্ট। যা শেখ হাসিনার পতনের শেষ কর্মদিবসে এসে দাঁড়ায় ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্ট। সূচক কমেছে ১ হাজার ৮৭৬ পয়েন্ট। যদিও এই সময়ে ৩০টি বেশি নতুন কোম্পানির শেয়ার সূচকে যোগ হয়েছে। এগুলো বাদ দিলে সূচকের পতন ২ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে যাবে।
একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবো বিনিয়োগকারীদের মাঝে এমন প্রত্যাশা ছিলো। কিন্তু সরকার পতনের পর চার কার্যদিবস বিনিয়োগকারীদের ঝলক দেখিয়ে বাজার আবারও অস্থিরতার বৃত্তে হাঁটতে শুরু করছে। ফলে বাজারের প্রতি ফের আস্থা সংকটে বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বিএসইসি নতুন চেয়ারম্যানের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন টানা দরপতনে বাজার নিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আস্থা সংকটে ভুগছেন। তাই নতুন চেয়ারম্যানের বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটু সময় লাগবে। তবে বাজার নিয়ে দু:শ্চিন্তায় কিছু নেই। বাজার যে জায়গায় আসছে এমনই বাজার ঘুরে দাঁড়াবো বলে তারা মনে করেন। তারা আরো বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং বড় বিনিয়োগকারীরা চাইলে পুঁজিবাজারকে ইতিবাচক রাখতে পারতো। কিন্তু তারা বরাবরের মতো আজও গা-ছাড়া ভাবে ছিল। যে কারণে বাজার ক্রমাগত পতনের ধারায় ছিল। শেষ বেলায়ও বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেন ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৬০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭১৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২২৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ২৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৯৩ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৪ টির, দর কমেছে ৩০১ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২ টির। ডিএসইতে ৫১৮ কোটি ৬১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৮৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৮০৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪৩০ পয়েন্টে। সিএসইতে ২১৫ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৫৩ টির এবং ২৩ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।