শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের টানা দরপতন কিছুতেই থামছে না। দিন যত যাচ্ছে পতনের মাত্রা তত বাড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে বেড়েই চলেছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন দেখা গেলেও এখন ফের টানা দরপতনে পুঁজিবাজার। মুলত শেখ হাসিনা সরকারের আমলেও পুঁজিবাজার পতনের মধ্যে নিমজ্জিত ছিল। পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দাম কমার সীমা কমিয়ে দেয়। কিন্তু তাতেও পতন ঠেকানো যায়নি।

বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় পতন আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে হাসিনা সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে টানা উল্লম্ফন দেখা যায়। এতে বড় লোকসান থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন দেখতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সে স্বপ্ন সত্যি হয়নি। আগের মতোই টানা দরপতন হচ্ছে। নতুন করে টানা পাঁচ কার্যদিবস ধরে দরপতন চলছে।

মুলত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যান ভারতে। হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম চার কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ৮০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে নতুন অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে ফের টানা দরপতন দেখা যাচ্ছে। অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে নয় কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে আট কার্যদিবসেই বেশির ভাগ কোম্পানির শয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে সরকার পতন কিংবা নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাদের পরিবর্তন কোন কারণেই গতি পাচ্ছে না দেশের পুঁজিবাজার। উল্টো গত কয়েকদিন ধরে টানা দরপতনে ডুবেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীদের জন্য পাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনোভাবেই থামছে না সূচকের পয়েন্ট হারানো ও দরপতন। বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ আর ক্রন্দন। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। ভিটেবাড়ি ও সম্পদ বিক্রি করে এখানে বিনিয়োগ করে আজ পথে বসেছে। আশার আকাশে প্রতিদিনই নিরাশার কালো মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। লোকসান দিতে হতে বিনিয়োগকারীরা আজ সর্বশান্ত হচ্ছেন। ফলে টানা দরপতনে পুঁজিবাজারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদে মতিঝিলের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।

সূত্র মতে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১০৮ দশমিক ৪০ পয়েন্ট কমেছে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬০৬ পয়েন্টে। এছাড়া, ডিএসইর অপর সূচক ‘ডিএসইএস’ ২৮ দশমিক ২৮ পয়েন্ট কমে ১২০১ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৪৫ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট কমে ২০৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সূত্র বলছে, আজ ডিএসইতে ৫৩৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ৫১৮ কোটি টাকা। তবে আওয়ামী সরকারের পদত্যাগের পর ২ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেও তা পর্যায়ক্রমে নিম্নমুখী হতে শুরু করে।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, সাবেক চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১০ কোটি টাকার। কিন্তু পরের দিনেই তা অর্ধেক কমে যায়। অভিভাবক শূন্যতায় গত ১৮ আগস্ট লেনদেন নেমে আসে ৪৮০ কোটি টাকায়। একইদিনে বিএসইসিতে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলেও পরের কার্যদিবসগুলোতে দরপতন অব্যাহত ছিলো। এদিকে আজ বুধবার ডিএসইতে মোট ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১১টি কোম্পানির, বিপরীতে ৩৭১ কোম্পানির দর কমেছে। পাশাপাশি ১২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর ছিলো অপরিবর্তিত।