ডিএসইর অনিয়ম-দুর্নীতি খুঁজে বের করতে চার সদস্যের কমিটি গঠন
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজে বের করতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরিচালক আবুল কালামকে প্রধান করে বুধবার চার সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পরিচালক মোল্লা মো. মিরাজ উচ সুুন্নাহ, উপপরিচালক বনী ইয়ামিন খান ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মাদ সাদেকুর রহমান ভূইয়া। কমিটিকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের কাছে রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
গত সোমবার বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানর খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নিয়েই জানান, অতীতের ভুলগুলো শোধরাতে কাজ করতে হবে। এরপর বুধবার এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ১৪-১৫ বছরে দেশের পুঁজিবাজারে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত করে তা পরিষ্কার করে পুঁজিবাজারকে সুস্থ ও স্বাভাবিক ধারায় ফেরাতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, দেশের প্রধান পুঁজিবাজার অনিয়ম আর অদক্ষ নেতৃত্বে রুগ্ন হয়ে পড়েছে। ডিএসইর আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তি খাত অত্যন্ত দুর্বল। সার্ভার সমস্যা যেন নিত্যদিনের ঘটনা। এতে বিভিন্ন সময়ে বিঘ্ন ঘটে লেনদেন। শুধু তাই নয়, পরিচালনা পর্ষদও (বোর্ড) ছিল এক রকম অকার্যকর। এমনকি ব্যবস্থাপনায় ছিল চরম স্বেচ্ছাচারিতা। মেধাবীদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একটি অংশও শেয়ার ব্যবসাসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। প্রভাবশালী মহাব্যবস্থাপকদের (জিএম) চিন্তার বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় না। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পদত্যাগ ছিল নিয়মিত ঘটনা। সাধারণ কর্মকর্তারা অনেকেই নিরাপত্তাহীন। অন্যদিকে ডিএসইর কারিগরি উন্নয়নে চীনের ৩০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করার কথা ছিল। এখনো সে বিনিয়োগ আসেনি।
বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর স্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ হয়েছে। তবে পর্ষদের অধিকাংশ সদস্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। উদ্ভাবনী কাজ দূরের কথা, নিয়মিত কাজগুলোই যেনতেনভাবে করা হচ্ছে। মিটিংয়ের সম্মানীর টাকার বাইরে তাদের চিন্তা-ভাবনা কম। দীর্ঘ সময়ে ডিএসইর পর্ষদের দূরদর্শী কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল না। দেশের সম্ভাবনাময় এই প্রতিষ্ঠানটিতে সময়োপযোগী গবেষণার অভাব। এখানে ভালো কোম্পানি হাতেগোনা কয়েকটি। আর ভালো কোম্পানি আনার বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। লেনদেন, পেশাগতভাবে দক্ষ মানবসম্পদ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। নতুন পণ্য চালু না করে, শুধু ইকুইটি (মূলধন) ভিত্তিক বাজারব্যবস্থা বিদ্যমান। বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণের জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে এমডি পদত্যাগ করা ডিএসইর নিয়মিত ঘটনা। প্রতিষ্ঠানটিতে পরপর পাঁচজন এমডিই পদত্যাগ করেছেন। পর্ষদের সঙ্গে দূরত্বের কারণে ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট পদত্যাগ করেন তারিক আমিন ভূঁইয়া। এর আগে পর্ষদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর পদত্যাগ করেন কাজী ছানাউল হক। ২০১২ সালের ২৮ মে পদত্যাগ করেন তৎকালীন ডিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোশাররফ হোসেন।