চরম আস্থাহীনতায় নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা, পতনের বৃত্তে পুঁজিবাজার
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পরিস্থিতি পাল্টালেও এখনো অস্থিরতা কাটেনি পুঁজিবাজারে। কয়েক বছর ধরে নানা অনিয়মের কারণে অস্থির পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই দেশের পুঁজিবাজারে মন্দাভাব চলছে। চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়।
বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল অন্তর্র্বতী সরকারের আমলে পুঁজিবাজার আলোর মুখ দেখবে। স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে। সেখানে কোনো ক্ষতিকর হস্তক্ষেপ থাকবে না। তবে আলোর মুখ তো দুরের কথা গত দেড় মাসে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে।
ফলে দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিবাজারে চরম আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত কমেছে সূচক ও শেয়ারের দাম। ফলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীরা। যার ফলে পুঁজিবাজার নিয়ে দেখার কেউ নেই। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট থাকায় নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না কেউ। এছাড়া দিন দিন বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে।
ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের আয় কমে যাওয়ায় তারাও বিপাকে; কোনো কোনো হাউস কর্মচারীদের বেতন দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেক হাউসই ব্যয় সংকোচনে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এছাড়া বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ একেবারেই কমে গেছে। ফলে লেনদেনও দিন দিন কমেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিনিয়োগকারীদের ভাবনা ছিলো আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজার চাঙা হবে। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও চার কার্যদিবস সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। তবে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হওয়ার পর পুনর্গঠিত বিএসইসি পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে পারছে না। বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা । যার কারণে সূচক ও লেনদেনে ভাটা পড়েছে।
এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী ও প্রভাষক কাজী হোসাইন আলী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে পুঁজিবাজারে চরম আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার পুরনো পথেই হাঁটছে। নিজেদের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারণে হতাশ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। যার ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে প্রতিদিন দরপতন হচ্ছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজার ইস্যুতে কোন যুগান্তকারী পদক্ষেপে না নিলে আস্থা ফেরানো কঠিন বলে মনে করছেন তিনি।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট রয়েছে। এ ছাড়া বাজারে বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম। যেসব কোম্পানি রয়েছে, সেগুলোতে বিনিয়োগের পর দিনই দাম কমে যাচ্ছে। বিনিয়োগের মতো ভালো কোম্পানির অভাব রয়েছে। এ জন্য নতুন কোম্পানি আনার বিকল্প নেই। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে কার্যকর সংস্কার করতে হবে। তা হলেই কেবল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার হবে। এছাড়া এই মুহুর্তে বাজার ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন বলে মনে করেন তিনি।
ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান বলেন, পুঁজিবাজারে কোনো মেনুপুলেটর নেই। কোনো সিন্ডিকেট নেই। যারা এতদিন নানা অনিয়ম জালিয়াতি করেছে তারা অনুপস্থিত। তবে এখন কেন বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না? এর উত্তর নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দিতে হবে।
এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ব্যাংক খাতের শেয়ারের দরপতনে সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। তেমনি সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার পরিমানে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬২৪ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৬৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৫৩ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৫ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৭ টির, দর কমেছে ১৯৬ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪২ টির। ডিএসইতে ৫০৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৫৯পয়েন্টে। সিএসইতে ২২৮ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৪০ টির এবং ২৪ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।