পুঁজিবাজারে রক্তক্ষরণ নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা, বিএসইসি ব্যস্ত জরিমানায়
শহীদুল ইসলাম ও সাখাওয়াত হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা দরপতনের বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে দেশের পুঁজিবাজার। প্রতিদিনই পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি টানা দরপতনে লেনদেন খরাও দেখা দিয়েছে। ফলে দিন দিন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। তবে বাজার স্থিতিশীল না করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা একেক দিন এক হঠকারী সিদ্ধান্তে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে পুঁজিবাজার।
তবে বাজার কী ভাবে স্থিতিশীল করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ন্যূনতম ধারনা নেই বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন বিনিয়োগকারী সহ বিভিন্ন হাউজের ট্রেডাররা। অন্যদিকে বিএসইসি চেয়ারম্যান ব্যস্ত রয়েছেন তদন্ত কমিটি ও জরিমানা ইস্যুতে। এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৪৫০ পয়েন্ট। এর মধ্যে গত তিনদিনে সূচক কমেছে ২১৫ পয়েন্ট। সোমবার কমেছে ৩৪ পয়েন্ট, মঙ্গলবার কমেছে ৩৮ পয়েন্ট এবং বুধবার কমেছে ১৩২ পয়েন্ট।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গত দুই বছরে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন হয়েছে। এরমধ্যে অনেকদিন পতনের সেঞ্চুরি হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট ডিএসইর সূচকের পতন হয়েছিল ১০৪ পয়েন্ট। ওই পতন ছিল গত দুই বছরের মধ্যে অন্যতম বড় দরপতন। আজ সেই পতনকেও ছাড়িয়ে ইউনুস সরকারের আমলে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে সব্বোর্চ দরপতন হয়েছে। ফলে এর দরপতনকে বিনিয়োগকারীরা স্বরণকালের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ দরপতন বলে মনে করছেন।
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী ও প্রভাষক কাজী হোসাইন আলী বলেন, পুঁজিবাজারে কারসাজি ও অনিয়মের শাস্তি হওয়া উচিত। তবে বাজার স্থিতিশীল না করে কী ভাবে শাস্তির কথা ভাবছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এছাড়া টানা দরপতনের ফলে যেখানে বড় বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাইডলাইনে সেখানে একের পর এক তদন্ত কমিটি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। এর দায় ভার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর সাপোর্ট তৈরি না হওয়ায় এবং শাস্তির আওতায় থাকা সালমান এফ রহমান ও শিবলী রুবাইয়াতের প্রেতাত্মারা বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলছেন। যে কারণে বাজার অব্যাহতভাবে নিচের দিকেই নামছে। প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না থাকায় বাজারের পতন ঠৈকানো যাচ্ছে না।
এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী রহুল আমীন গাজী অভিযোগ করে বলেন, বিএসইসি অন্ধ মানুষের মতো কেবল শাস্তিই আরোপ করে যাচ্ছে। কোন কোন হাউজ থেকে অস্বাভাবিক সেল প্রেসার দিয়ে বাজারকে অব্যাহতভাবে নিচে নামাচ্ছে, সেই বিষয়ে কার্যকরভাবে মনিটর করা হচ্ছে না। যার ফলে বাজারে অস্বাভাবিক সেল প্রেসারও থামছে না। এর ফলে টানা দরপতন হচ্ছে।
একাধিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভের সুরে বলেন, বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার পুঁজিবাজার ইস্যুতে পুরোপুরি ব্যর্থ। তিনি পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না করে একের পর এক কদন্ত কমিটি দিয়ে বাজারকে ধ্ব:স করছেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার বিএসইসি বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় রেকর্ড অর্থ জরিমানা করেছে। এর প্রভাবে সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। মুলত বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কারসাজি ও অনিয়মের জন্য শাস্তি আরোপ করে চলেছে। তবে ধারাবাহিক শাস্তি আরোপ করে কী বাজার স্থিতিশীল করা যায় এপ্রশ্ন খোদ বিনিয়োগকারীদের। এছাড়া বিএসইসি চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে প্রতিটি তদন্ত কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বেক্সিমকো) শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড জরিমানার ফলে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। এদিন ডিএসইতে শেয়ার বিক্রির হিড়িক থাকলেও অধিকাংশ কোম্পানির ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৩২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৫১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৮ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৯ টির, দর কমেছে ৩৪৭ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২২ টির। ডিএসইতে ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩০৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৯১ পয়েন্টে। সিএসইতে ২১৬ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৭৭ টির এবং ১৫ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।