বিএসইসি ও আইসিবি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি ট্রেডারদের
তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকাধীন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ডিএসইর তালিকাভুক্ত বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেডাররা। এ সময় তাদের সঙ্গে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতা এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ বুধবার (২ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানী মতিঝিলের ইউনূস সেন্টারের সামনে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন হাউজের ট্রেডারা। পরে তারা আইসিবির প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে সেখানে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের ‘এক দফা এক দাবি, মাকসুদ তুই কবে যাবি’, ‘মাকসুদের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘আবু আহমেদ, ভুয়া ভুয়া’, ‘বিএসইসি ভুয়া’, ‘তুমি কে আমি কে, বিনিয়োগকারী-বিনিয়োগকারী’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এতে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারী সুমন দাশ বলেন, পুঁজিবাজার দেশের সব ব্যাংকের ফাদার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এখানকার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত এক ব্যক্তিকে দেওয়া হলো। বেসরকারি ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত একজন অযোগ্য কর্মকর্তা কী ভাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান হয় এ প্রশ্ন তুলেন তিনি।
বিএসইসিতে সংস্কারের প্রয়োজন আছে দাবি করে তিনি আরো বলেন, আমরা একটা ক্রান্তিকাল পার করছি। নিয়ন্ত্রক প্রধান হিসেবে তাঁর (রাশেদ মাকসুদ) উচিত ছিলো পুঁজিবাজারের সূচকের প্রতি প্রথম নজর দেওয়া। সূচকের পতন রোধ করে বিনিয়োগকারীদের মনে আস্থা তৈরির পর সংস্কার কার্যক্রমে আগানো। কিন্তু শুরুতেই সংস্কারের টানা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিএসইসির কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। তারপর সব সিদ্ধান্ত শর্ট আউট করে কোন নির্দেশনা কখন দেওয়া হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা উচিত। যাতে পুঁজিবাজারের প্রাণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। কিন্তু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা তৈরি না করে হুটহাট সংস্কারের নতুন নির্দেশনা জারি করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নয়। এতেই পুঁজিবাজারে দরপতন কাটবে না, বরং বিনিয়োগকারীরা আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
তিনি বলেন, অনির্বাচিত, অপরীক্ষিত ব্যক্তি বিএসইসি, ডিএসইর চেয়ারম্যান হতে পারবে না এমন নিয়ম করতে হবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের কাছে তাদের জবাবদিহিতার বিষয় থাকতে হবে। অন্যথায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে এরাও পাল্টে যাবে, তাতে বিনিয়োগকারীদেরই ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
আন্দোলনে আসা আরেক বিনিয়োগকারী শরীফ হোসেন বলেন, বিশ্বের কোন পুঁজিবাজারে ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোন বিষয় নেই। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এমন নানান ক্যাটাগরি আছে। এই ‘জেড’ ক্যাটাগরির জন্য কোন কোম্পানি বা কোম্পানির কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। কিন্তু দিনশেষে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লোকসান গুণতে হয়।
বিএসইসি চেয়ারম্যানকে অসুস্থ দাবি করে আরেক আন্দোলনকারী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আমরা একজন বাজারবান্ধব লোক চাই। যাকে তাকে এনে বসিয়ে দিবে এমন কাউকে চাই না। পুঁজিবাজার বুঝা অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে আমি পুরোপুরি দোষ দিব। তার ইশারায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বিএসইসি যে ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা করেছে তা কখনোই আদায় করতে পারবে না। কিন্তু এই জরিমানার কারণে বিনিয়োগকারী এবং বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
আন্দোলনে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বিএসইসি ও আইসিবি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি ছাড়াও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্থিতিশীল পুঁজিবাজার বিনির্মাণ, ডিএসই পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবি ও গেইন টেক্স প্রত্যাহারের দাবী এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না করা পর্যন্ত তদন্ত কমিটি বন্ধ রাখতে রাখতে হবে।
পরবর্তীতে একটি মিছিল নিয়ে আইসিবির কার্যালয় ঘেরাও করেন বিনিয়োগকারী সহ ট্রেডাররা। এর আগে আজ সকাল ১১টার দিকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বিনিয়োগকারীরা। এ সময় তারা বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করেন। একইসঙ্গে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠন করার দাবি জানান তারা।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানির দর ইস্যু মূল্যের নিয়ে যাওয়া মাত্রই তাদের বাধ্যতামূলক বাইব্যাক আইনের আওতায় আনতে হবে। এর বিকল্প কোন পথ নেই। এই পন্থা অনুসরণ করলে শেয়ারের বিভাজন হবে না। পুঁজিবাজারে কোন এসএমই মার্কেট থাকতে পারে না। পুঁজিবাজারে কোন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে হলে তাদের ৫০ কোটি টাকা থাকতে হবে।
এদিকে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ১৩২ পয়েন্ট কমেছে। এছাড়া, ডিএসইর অপর সূচক ‘ডিএসইএস’ ৩২ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৫১ পয়েন্ট কমেছে।