দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বাড়লেই এর কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ জারি হলেও সাম্প্রতিক টানা দরপতনের কারণ জানতে চায় না পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা অথবা স্টক এক্সচেঞ্জ। ফলে শেয়ারের দর বাড়ার কারণ জানতে পারলেও দর কমার কারণ কখনও জানতে পারেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে কোন কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ার ফলেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপে হতাশা প্রকাশ করছেন বিনিয়োগকারীরা।

সূত্র মতে, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেডের মাত্র ২২ শতাংশ শেয়ারের দর বাড়ার ফলে বিষয়টি তদন্ত করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি ডিএসইর চিফ রেগুলেটরি অফিসারকে (সিআরও) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, ডিএসইর সিআরওকে বিষয়টি অনুসন্ধান করে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসিকে জানাতে বলা হয়েছে। চলতি বছরের ২৬ জুন থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে কারা কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছে, তা বিএসইসিতে পাঠাতে বলা হয়েছে। এদিকে, গত সপ্তাহের চার কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৭.৭০ টাকা বা ২২.৯৮ শতাংশ। বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ৩৩.৫০ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের ক্লোজিং দর হয় ৪১.২০ টাকা।

এর ফলে কোম্পানিটির শেয়ার ডিএসইর সাপ্তাহিক দর বাড়ার তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে। এদিকে বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির গড়ে ২৫ কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৭.০৪ শতাংশ। এর ফলে কোম্পানিটি লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করছে।

এর ফলে অগ্নি সিস্টেমসকে তদন্ত কমিটি গঠন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ কোম্পানিটি শেয়ার দর বাড়ার কারণ জানতে না চেয়ে কী করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। এভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারে হস্তক্ষেপ করলে বাজার কখনই স্থিতিশীল হবে না। এছাড়া সাম্প্রতিক দুই মাসে টানা দরপতনে ৭০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর ৭০-৭৫ শতাংশ উধাও হলেও এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিরব ভুমিকা পালন করছেন।

যে কারণে দরপতনে নীরব দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকে না বিনিয়োগকারীদের। এ পরিস্থিতির অবসান চান বিনিয়োগকারীরা। দর বাড়ার পাশাপাশি কমার কারণ জানতে চান তারা। কারণ সাম্প্রতিক টানা দরপতনে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত দর উধাও হয়ে গেছে। অথচ এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন ভুমিকা দেখা যাচ্ছে না। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপর ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের।

বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা কী আসলে বাজার ভাল চায়। যদি বাজার ভাল চায় তা হলে একটা কোম্পানি ২০ শতাংশ দর না বাড়তেই তদন্ত দেয় কী করে। এ ভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা শেয়ারের দর বাড়লেও তদন্ত করলেও পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার অন্তরায় থেকে যাবে। কারণ শেয়ারের দর না বাড়লে এ বাজারে কেউ বিনিয়োগ করবে না। তবে অস্বাভাবিক কিছু হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা খতিয়ে দেখুক এটা নিয়ে আমাদের দ্বিমত নয়।

সূত্র মতে, যে কোন শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়লেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে এর কারণ জানতে চায় স্টক এক্সচেঞ্জগুলো। যা সত্যিই প্রসংশনীয়। কেননা কোন কোম্পানির শেয়ার দর কারণ ছাড়া অস্বাভাবিক হারে বাড়লে সেখানে কারসাজির সম্ভাবনা থাকে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়। তাই বাজারের নীতি-নির্ধারক হিসেবে এর কারণ খতিয়ে দেখা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নৈতিক দায়িত্ব্য।

কিন্তু একটি কোম্পানির শেয়ার দর বাড়লেই যে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তা কিন্তু নয়। কারণ ছাড়া কোন কোম্পানির শেয়ার দর কমলেও বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে এক্ষেত্রে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন কোম্পানির ধারাবাহিক দর বৃদ্ধির নেপথ্যে যেমন কারণ প্রয়োজন ঠিক তেমনই অব্যাহত দর পতনের পিছনেও কারণ প্রয়োজন। তাই দর বাড়লে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ যেমন সক্রিয় হয়ে পড়ে কমলেও একই ভূমিকা থাকা উচিত।

কিন্তু প্রশ্ন সেটি নয়, প্রশ্ন হলো একটি কোম্পানির দর ৫ কার্যদিবসে ৫০ শতাংশ বাড়লো নিয়ন্ত্রক সংস্থা খতিয়ে দেখতে পারে। কিন্তু নামমাত্রা শেয়ারের দর বাড়লেই খতিয়ে দেখা হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নেই। কারণ সাম্প্রতিক দর পতনে যে ভাবে শেয়ারের দর পড়ছে এক্ষেত্রে বিএসইসি কী ভুমিকা দিয়েছে। এই বৈষম্য কেনো? কার স্বার্থে? এমন প্রশ্ন এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

তাদের অভিযোগ, কোনো কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে দর সামান্য বাড়লেই নোটিশ পাঠাতে ডিএসইর চুলকানি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু দিনের পর দিন যখন একটি কোম্পানির দর পড়তে থাকে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দর কমা নিয়ে আতঙ্ক শুরু হয়ে যায়, তখন ওই নোটিশওয়ালাদের চুলকানি বন্ধ থাকে, তারা তখন সুখ নিদ্রায় বিভোর থাকেন। এটিও আরেকটি বৈষম্য।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলছেন, শেয়ারের দর বাড়লে ডিএসই কোম্পানিগুলোকে শোকজ করে। এটা ঠিক আছে। কিন্তু যখন শেয়ারের দর কমে তখন শোকজ করে না কেন? দর বাড়লে নোটিশ দেয়াটা যদি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তাহলে দর কমলে, কেন দর কমছে তার কারণ জানাটা দায়িত্বের মধ্যে পড়বে না কেন? তাদের মতে, বিনিয়োগকারীদের জন্য দর বাড়ার কারণ জানা যেমন জরুরী, তেমনি দর কমলে তার কারণ জানাটাও জরুরী।