মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। সরকার পরিবর্তন হলে ডিএসসির উচ্চ পর্যায়ে পরিবর্তন হলেও কোন প্রভাব পড়েনি পুঁজিবাজারে। বরং দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না করে বাজার সংস্কার করছেন। ফলে তলানিতে ঠেকেছে লেনদেন। মনে হচ্ছে পুঁজিবাজার আর কোরামিন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কারন শিবলী কমিশন কোরামিন নিয়ে বাজার বাঁচিয়ে রেখে বিনিয়োগকারীদের নি:স্ব করেছেন। আর যেটুকু পুঁজি ছিল গত দ্ইু মাসে রাশেদ মাকসুদ কমিশন বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়ে দিয়েছেন। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মাঝে চলছে হাহাকার আর নীরব ‘রক্তক্ষরণ’। এ যেন দেখার কেউ নেই।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১০ সালে ধসের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা দেশের পুঁজিবাজারের। গত ২ মাসে ৯৮ শতাংশ পোর্টফোলিও পুঁজি ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে। এছাড়া পুঁজিবাজারের এমন খারাপ সময় বিগত ৩০ বছরের ইতিহাসে দেখা যায়নি। ক্রমাগত সূচক ও শেয়ারের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছে। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের স্বস্তির খবর দিতে পারেনি। বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডার সবার মনেই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পুঁজিবাজারে রক্ষক্ষরণ আর কতদিন চলবে, এর শেষ কোথায়?

ফলে দিন যত যাচ্ছে পুঁজিবাজারে পতনের মাত্রা তত বাড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা ৫ কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে ১১ কার্যদিবসই পতনের মধ্যে থাকলো দেশের পুঁজিবাজার। বাজারের এই পরিস্থিতিকে নীরব ‘রক্তক্ষরণ’র সঙ্গে তুলনা করছে বিনিয়োগকারীরা।

তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে ভয়াবহ দরতপন হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন এবং তাদের নীরব রক্তক্ষরণ হচ্ছে। পুঁজি হারানোর দুশ্চিন্তায় তারা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। ফলে সংসারেও অশান্তি দেখা দিচ্ছে।

সাইফুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজারে যে ভয়াবহ দরতপন হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। পোর্টফোলিওতে যে কয়টি শেয়ার কেনা আছে, প্রত্যেকটির দাম ৬০-৭০ শতাংশের বেশি গত দুই মাসে কমে গেছে। বিনিয়োগ করা পুঁজি চার ভাগের এক ভাগ হয়ে গেছে, তারপরও দরপতন থামছে না।

তিনি বলেন, প্রতিদিন আশায় থাকি পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি ভালো হবে। সকালে লেনদেনের শুরুতে বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকে, কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে আবার দরপতন শুরু হয়। প্রতিদিন বাজারে একই চিত্র দেখতে হচ্ছে। প্রতিদিন শেয়ারের দাম কমে লোকসান বাড়ছে, এটা দেখা ছাড়া আমাদের যেন আর কোনো উপায় নেই।

মনির হোসেন নামের আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা এখন কঠিন সময় পার করছেন। প্রতিদিন বিনিয়োগকারীদের লোকসান বাড়ছে। এ পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে থামবে বলা মুশকিল। যে হারে দরপতন হয়েছে, তাতে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ৬০-৭০ শতাংশ লোকসানে রয়েছে। এত লোকসানে শেয়ার বিক্রি করা সম্ভব না। আবার ধরে রেখে যারা বিক্রি করছেন না, তাদের লোকসান বেড়েই চলেছে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে প্রতিনিয়ত দরপতন হচ্ছে, কিন্তু বাজারকে এই পতনের বৃত্ত থেকে বের করে আনতে সংশ্লিষ্টদের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। দিন দিন পুঁজিবাজার রক্তশূন্য হয়ে পড়ছে। দায়িত্বশীলদের উচিত পুঁজিবাজারের দিকে নজর দেওয়া। এভাবে চলতে থাকলে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে যাবেন, বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা থাকবে না।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু গণমাধ্যমকে বলেছেন, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আশাকরি আগামী ২ মাসের মধ্যে অর্থনীতির প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়বে। পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির সংকট রয়েছে, ভালো কোম্পানি আনতে হবে। এ জন্য ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সেটি করতে সময় লাগবে বলেও মনে করেন তিনি।