শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সুচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে গত মঙ্গলবার কিছুটা সূচকের উত্থান দেখা দিলেও এক দিনের ব্যবধানে ফের সূচকের বড় পতনে পুঁজিবাজার। এর ফলে দরপতনের বৃত্তে থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। টানা দরপতনে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা লক্ষ করা যাচ্ছে।

পতন থামাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ কোনো পর্যায় থেকে কোনো উদ্যোগ না থাকায় এই হতাশা বিনিয়োগকারীদের বাজারবিমুখ করতে শুরু করেছে। এ কারণে প্রতিদিনই বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাতে বাজারে ক্রেতার সংকট দেখা দিয়েছে। তার বিপরীতে বিক্রেতা বেশি।

তবে চলমান এ দরপতনে চরমভাবে আস্থা ও তারল্য সংকটে পড়েছে পুঁজিবাজার। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আস্থা সংকট থাকায় নতুন বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হচ্ছেন না। এছাড়া ‘এখনও বিনিয়োগ করলে লোকসান হবে’ এমন ভয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হাতগুটিয়ে বসে আছেন। ফলে বাজারে নতুন করে তারল্য সংকট প্রবল আকারে দেখা দিয়েছে। সংকট আরও দিন দিন ঘনীভূত হওয়ার শঙ্কা বিনিয়োগকারীসহ ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া নতুনদের আকৃষ্ট করতে না পারা এবং বাজারে সক্রিয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাবে সংকট আরও গভীর হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে অংশীজনের অংশগ্রহণ কমছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাজারে সুফলভোগীরাও নতুন বিনিয়োগ থেকে সরে এসেছেন। এছাড়া প্রতিনিয়ত ফোর্সসেলে বাজার দরপতনকে আরো উস্কে দিয়েছে। শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজগুলো থেকে প্রতিনিয়ত ফোর্সসেল হচ্ছে। ফোর্সসেল বন্ধে কোন কার্যকরী উদ্যোগ নিচ্ছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অপরিপক্ব সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। যদিও পুঁজিবাজার সংস্কারের অংশ হিসেবে বিএসইসির নীতিনির্ধারণীর দায়িত্ব নিয়েছে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার। এরই মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের ২ মাস পেরিয়ে গেলেও আস্থার উন্নয়ন তো দূরের কথা, উল্টো আস্থা আরও তলানিতে নেমেছে।

এর মধ্যে নতুন কমিশনের অযাচিত সিদ্ধান্ত, অযৌক্তিক বক্তব্য, অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই সংস্কার উদ্যোগ, আগের কমিশনের জারি করা ভুল নীতির প্রয়োগ, লোকদেখানো বড় জরিমানা আরোপ, স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে অদক্ষতা পুঁজিবাজারে একের পর এক সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে। তৈরি হচ্ছে নতুন বিতর্ক। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিতর্কহীন উদ্যোগের ঘাটতি পুঁজিবাজারের দৈনন্দিন লেনদেনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করছে। এর ফলে পুঁজিবাজারে দরপতন থামছেই না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, টানা দরপতনে প্রতিদিনই পুঁজিবাজার ছাড়ছেন অনেক বিনিয়োগকারী। এই দরপতনের ফলে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের অনেকের শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়ছে। শেয়ারের দাম কমে যখন একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নেমে যায়, তখন ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীকে নতুন করে অর্থ বিনিয়োগের তাগাদা দেওয়া হয়।

যদি কোনো বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগ না করেন, তখন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক তাঁর শেয়ার বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করে নেয়। ফলে বাজারে যত বেশি দরপতন হতে থাকে, ফোর্সড সেলের চাপও তত বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত বাজার স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নিতে হবে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৭১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৬৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৬২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৯২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৯ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫২ টির, দর কমেছে ৩০৬ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১ টির।

ডিএসইতে ৩২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৩৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫০২ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৪ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১২৭ টির এবং ২৫ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৩ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
৮ এর পাতায় ২ কলাম