এম এল ডাইংয়ের নো ডিভিডেন্ডে হতাশ শেয়ারহোল্ডররা, শাস্তির দাবী পরিচালকদের
সাখাওয়াত হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি এম এল ডাইংয়ের সমাপ্ত অর্থবছরে নো ডিভিডেন্ড শেয়ারহোল্ডরা হতাশ হয়েছেন। কোম্পানিটির মুনাফা থাকা স্বত্বেও নো ডিভিডেন্ডে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে। কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডারদের টাকায় ব্যবসা করে প্রতারনা করছেন। কারণ সমাপ্ত অর্থবছরেও কোম্পানিটি মুনাফায় ছিলেন। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১৪ পয়সা এবং আগের বছর শেয়ারপ্রতি ১৯ পয়সা আয় হয়েছিল। ফলে কোম্পানিটির উপর ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ঝাড়ছেন এম এল ডাইং কোম্পানির প্রতি, তারা অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে পুঁজিবাজারে এসে শেয়ারহোল্ডারদের নিরাশ করছে। নিজেদের সুবিধা লুটে নিয়ে হতাশ করছে বিনিয়োগকারীদের। আর এই ক্ষোভ প্রকাশের জন্য তারা বেছে নিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এখানে তারা কোম্পানি ও তার কর্তৃপক্ষের নামে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করছে, যা সহজেই ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ২০১৮ সালে এমএল ডাইং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটির আসল রুপ বের হতে শুরু করছে। বিষয়টি প্রতারণার শামিল উল্লেখ করে ক্ষোভে ফুঁসছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা অভিযোগ করছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন করেছে। এ ধরনের কোম্পানি আসলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজারে আসে না। এদের উদ্দেশ্য থাকে ফায়দা হাসিল করা। এ ক্ষেত্রে তারা পুঁজিবাজারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। এ ধরনের কোম্পানির পরিচালকদের শাস্তি হওয়া দরকার বলে জানান তারা।
এ বিষয় জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিনিয়োগকারী বলেন, ২০১০ সাল থেকে লোকসান দিতে দিতে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এরপর কোম্পানিগুলোর প্রতারণা আমাদের কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার শামিল। এসব কোম্পানির মালিক আসলে পুঁজিবাজারে আসেন প্রতারণার উদ্দেশ্যে। ব্যাংক থেকে টাকা আনলে তাদের সুদ দেওয়া লাগে। কিন্তু পুঁজিবাজারে এলে সেটা করতে হয় না। পক্ষান্তরে পায় কর সুবিধা। সে কারণে এরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আঁতাত করে বাজারে আসে। পরে বিনিয়োগকারীদের টাকা লুট করে চলে যায়। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।
এ প্রসঙ্গে লুৎফর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি আমাদের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করবে ভাবিনি। কোম্পানি এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে। এ সুযোগে তারা শেয়ারের দর কমিয়ে নিজেরা কিনে নিতে চায়। আগামীতে নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য হয়তো তারা ভালো ডিভিডেন্ট ঘোষণা করবে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তির কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে। তাদের অভিমত, কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার আগে তার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ভালো করে জেনে তারপরই তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া উচিত।
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী প্রভাষক কাজী হোসাইন আলী বলেন, কোম্পানিগুলো যখন বাজারে আসতে চায়, তখন ইস্যু ম্যানেজার থেকে শুরু করে অডিটরসহ সংশ্লিষ্ট সবাই কোম্পানির আর্থিক অবস্থার একটি সুন্দর বিবরণ উপস্থাপন করেন। বিএসইসির উচিত, এটা ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া। এছাড়া কোম্পানিগুলো শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে লাভ লোকসানের বিষয়ে কোনো লুকোচুরি করছে কিনা, তাও দেখা দরকার।
অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার জন্য দায়ী মূলত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছেন, তারা। তারা বাজারে আসার কিছুদিন পরই শেয়ার বিক্রি করে দেন। যে কারণে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হতে থাকে।