দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ব্যাংক খাতের মতো পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। দেশের পুঁজিবাজারের তারল্য বৃদ্ধিতে দেশীয় উৎসের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। চলমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণে মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ডিএসই থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মমিনুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারীরা যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একসাথে একটি প্লাটফর্ম হিসেবে যেতে পারি, তবে আমাদের পলিসিগত সুবিধা পাওয়া সহজ হবে। এ ছাড়াও, বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে আমাদের এক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিয়মিত গণসংযোগ করতে হবে।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারকে দক্ষ, স্বচ্ছ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্তমানে একটি দুর্লভ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোগত পরিবর্তন, অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত ও বিচারের সাথে সাথে বিনিয়োগকারী এবং মধ্যস্থতাকারীদের আস্থা অর্জনে বাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে এনবিআরের সাথে যোগাযোগ করে পুঁজিবাজারের স্বার্থে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, ডিভিডেন্ড ট্যাক্স, টার্নওভার ট্যাক্স হ্রাস করণসহ প্রাসঙ্গিক সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করছি।

পুঁজিবাজারের সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারলে কোনো সংস্কারই ফলপ্রসূ হবে না। স্বল্পমেয়াদে বাজারের আস্থা বৃদ্ধির জন্য আমাদের করণীয় কী রয়েছে, সে বিষয়েও একইসাথে কাজ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদে মার্কেটের আস্থা বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের এই মুহূর্তে কী করণীয় আছে, সেগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি জানান, দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি, বিচারহীনতা, নীতি অসঙ্গতি ও ভুল সিদ্ধান্তের অনিবার্য কারণস্বরূপ বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আজ অত্যন্ত দুর্বল ভিত্তিতে অবস্থান করছে। বর্তমান বাজারে কাঠামোগত সংস্কার ও অনিয়ম দূরীকরণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সকল বাজার মধ্যস্থতাকারীরা একযোগে কাজ করছে।

মমিনুল ইসলাম বলেন, ডিএসইর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মার্কেটের প্লোয়ারদের প্লে করতে দিতে হবে। যদি তারা কোন অনিয়ম করে, তবে রেগুলেটর তাদের ধরবে। আমাদের মার্কেটের যে সমস্ত সংস্কার প্রয়োজন, তা করার জন্য আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যাব।

সভায় মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধিরা বাজারের ওপর আস্থা, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, তারল্য সংকটের সমাধানে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল ব্যাংক কর্তৃক পুঁজিবাজারে এক্সপোজার বৃ্দ্ধি, ডাইরেক্ট লিস্টিং রুলস সংস্কার, দ্বৈত কর প্রত্যাহার, সাপোর্ট ফান্ড সৃষ্টি, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার, ইস্যুয়ার কোম্পানির জন্য প্রণোদনা, ডিএসইর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ, ফ্লোর প্রাইসের মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়া, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ,

প্রযুক্তি উন্নয়ন, মানসম্পন্ন আইপিও নিশ্চিতকরণ, মিউচুয়াল ফান্ডের আইপিও কোটা বৃদ্ধি, পাবলিক ইস্যু রুলসের সংস্কার, তালিকাভুক্তির পরে কোম্পানির মনিটরিং জোরদারকরণ, মার্জিন রুলস সংস্কার, মিউচুয়াল ফান্ড রুলসের সংস্কার, গবেষণা জোরদারকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, অতিরিক্ত তদারকি রহিতকরণ, পলিসিগত প্রতিবন্ধকতা দূরকরণ, এটিবি মার্কেট গতিশীল করাসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।

এ সময় ডিএসইর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, নাহিদ হোসেন, সৈয়দ হাম্মাদুল করীম, মোহাম্মদ ইশহাক মিয়া, শাহনাজ সুলতানা, শাকিল রিজভী, শরীফ আনোয়ার হোসেন, রিচার্ড রি রোজারিও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ।

এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাজেদা খাতুন, বিএমবির ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াদ মতিন, সেকেন্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী।