শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে দিন যতই যাচ্ছে দরপতন ততই বাড়ছে। বাজার নিয়ে বিএসইসি কোন পদক্ষেপই স্থিতিশীলতার দিকে ফেরাতে পারছে না। এনিয়ে নতুন করে টানা ছয় কার্যদিবস দরপতনের বৃত্তে পুঁজিবাজার।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন মাসের বেশি সময়েও পুঁজিবাজারের প্রত্যাশিত কোনো উন্নতি হয়নি। এতে বিনিয়োগকারীরা চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত। পরিবর্তনে পুঁজিবাজার আরও পতনের স্রোতে মিশেছে, যার কারণে আতঙ্ক-ভয়ে বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা শেয়ারগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন।

এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে লেনদেনের শেষ ঘণ্টায় এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপ বাড়ানোর কারণে সূচকের দরপতন হয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেন। সূচকের পতন হওয়ার পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। মুলত লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার ঘরেই আটকে রয়েছে।

অন্যদিকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে বিনিয়োগ করতে আস্থা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। উল্টো অনেকে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় বাজারে চলছে টানা পতনের মাতম। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর সাময়িক সময়ের জন্য চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল পুঁজিবাজার। কিন্তু কদিন যেতে না যেতেই পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন নিয়ে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও স্টক এক্সচেঞ্জের অংশীদারদের মধ্যে সংকট ঘনীভূত হতে থাকে। সরকার সংস্কারে উদ্যোগী হলেও বিএসইসির নীতির বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে।

মুলত গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্র্বতী সরকার অর্থ ও পুঁজিবাজারসহ সব খাতেই সংস্কারে হাত দেয়। এর অংশ হিসেবে সরকার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও (বিএসইসি) সংস্কার কার্যক্রম শুরু করে। গত ১৮ জুলাই সাবেক ব্যাংকার খোন্দকার রাশেদ মাকসুদকে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়।

একই সঙ্গে নতুন করে আরও দুই কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু এমন উদ্যোগে বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি আস্থাশীল হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৩৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৪৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৯৬ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৪ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৮ টির, দর কমেছে ১৬৩ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৩ টির। ডিএসইতে ৩০২ কোটি ৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৬ পয়েন্টে। সিএসইতে ২৩৩ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৫ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০৫ টির এবং ৩৩ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৬ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।