শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কোন পথে হাঁটছে দেশের পুঁজিবাজার, এ প্রশ্ন এখন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের। গত সাত কার্যদিবসে টানা দরপতনে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেওয়া পদক্ষেপগুলো কোন কাজে আসছে না। ফলে দিন যতই যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদে মতিঝিলের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বিনিয়োগকারীর পুঁজি শেষ।

নতুন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আসছে না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকছে যে শেয়ার কিনলেই লোকসান। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন এভাবে আর কতদিন চলবে। দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খাত পুঁজিবাজার ধ্বংসের ধারপ্রান্তে। এছাড়া বিএসইসি চেয়ারম্যানের উপর আস্থা সংকটে ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা।

মুলত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অর্ন্তর্বতী সরকার অর্থ ও পুঁজিবাজারসহ সব খাতেই সংস্কারে হাত দেয়। এর অংশ হিসেবে সরকার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও (বিএসইসি) সংস্কার কার্যক্রম শুরু করে। তবে কোন সংস্কারই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। ফলে সবার এখন একটা প্রশ্ন আবারও উল্টো পথে হাঁটছে দেশের পুঁজিবাজার। দেশের অর্থনীতির সব সূচক যখন ওপরের দিকে উঠছে ঠিক একই সময়ে নিচের দিকে নামছে পুঁজিবাজারের সূচক।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের মুল সমস্যা আস্থা সংকট। বিএসইসি চেয়ারম্যান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজারের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। যার ফলে তলানির দিকে হাটতে থাকা পুঁজিবাজার মাঝে মাঝে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে থাকে। সেই বিশ্রামের অংশ হিসেবেই সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে কিছুটা সূচক বাড়ছে। তবে সূচক বাড়লেও আতঙ্ক কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফেরাতে হলে সূচকের টানা উত্থানের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের মিশ্রাবস্থায় লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার পরিমানে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৪৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৯৪ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৮ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৯ টির, দর কমেছে ২০০ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৯ টির। ডিএসইতে ৩৫৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩০২ কোটি ৫ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৩২ পয়েন্টে। সিএসইতে ২১৮ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১৮ টির এবং ৩৫ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।