বিএসইসির বড় জরিমানার সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে, লেনদেনে ভাটা
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে বিএসইসির বড় জরিমানার সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাবে পুঁজিবাজারে লেনদেন খরা প্রকট হয়ে উঠেছে। মুলত অন্তর্র্বতী সরকারের চার মাসের মধ্যে আজ সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর একক কোনো কার্যদিবসে এটিই সর্বনিম্ন লেনদেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগের দিন অর্থাৎ গত ৪ আগস্ট পুঁজিবাজারে এরচেয়েও কম লেনদেন হয়েছিল। এদিকে লেনদেন খরার পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ কোম্পানি। এদিন পতন কমলেও প্রায় আড়াইশত কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। এতোগুলো কোম্পানির শেয়ার দর কমার ফলে পুঁজিবাজারে টাকার পরিমাণে লেনদেন ৩’শতের নিচে নেমে গেছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে কারসাজির অভিযোগে বেশ কয়েকটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালকদের মোটা অংকের জরিমানার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিএসইসির এই সিদ্ধান্তের ফলে পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে ইতিবাচকতার পরিবর্তে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়।
এই নেতিবাচক ধারণা থেকেই পুঁজিবাজারে আজকে এতোগুলোর কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। বাজারকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নানামূখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের ফলে মাঝে মাঝে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। তবে বেশিরভাগ কার্যদিবসই নেতিবাচক প্রবণতায় ডুবে থাকে পুঁজিবাজার।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানামূখী উদ্যোগের পরও স্থিতিশীলতায় ফিরছে না সূচক। বিষয়টা দুর্ভাবনার বিষয়। শেয়ারবাজার হচ্ছে দেশের অর্থনীতির অন্যতম একটা অংশ। এই গুরুত্বপূর্ণ অংশের এভাবে ধুকতে থাকা সমীচীন নয়। শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয় পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীলতায় ফিরাতে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
বাজারকে স্থিতিশীলতায় ফিরাতে কঠোর সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলেও তা প্রয়োগ করতে হবে। শুধু কারসাজির অভিযোগে কোম্পানিগুলোর কর্তা ব্যক্তিদের কিছু অর্থ দণ্ড করলেই বাজারের প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায় শেষ হয়ে যায় না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বাজার নিয়ে আরো কঠোর সিদ্ধাস্ত নিতে হবে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৮১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯০৮ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৫ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৭ টির, দর কমেছে ২৪৮ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬০ টির। ডিএসইতে ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৩৮ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৭৫ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০৩ টির এবং ২৬ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।