পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে নি:স্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা, লেনদেন ২৫৭ কোটি টাকা
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাতটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সবার চোখের সামনে প্রতিদিনই হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন। আতঙ্কে দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের। সূচকের মাঝে মধ্যে নামমাত্রা কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারে ভর করে উত্থান হলেও তার দ্বিগুনের বেশি কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হচ্ছে।
ফলে সূচকের কিছুটা উত্থান হলেও বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। তাদের পিঠ রীতিমতো দেওয়ালে ঠেকে গেছে। ফলে গত চার মাসে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর পুঁজি হারিয়ে বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ। যদিও পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস ও অর্থ উপদেষ্টা ইতিবাচক বক্তব্য দিলেও তাতে বিশেষ কোনো ফল লাভ হয়নি।
তেমনি দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজার সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করা হয়। তবে পুঁজিবাজারে সংস্কারের উদ্যোগে নতুন আশায় স্বপ্ন বুনতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হতে চললেও বাজারে স্থিতিশীলতা আসেনি। বরং দিনের পর দিন যে সংকট রয়েছে, তা আরও ঘনীভূত হতে চলেছে। এতে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে সূচক। ফলে এমন পরিস্থিতিতে শূন্য হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও। পুঁজি হারিয়ে ‘নিঃস্ব’ হয়ে বাজার ছাড়তে শুরু করেছেন অনেক বিনিয়োগকারী।
একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, এটা পুঁজিবাজার নয়, এটা লুটপাটের বাজার। টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হলেও বিএসইসি কোন ভুমিকা পালন করছে না। বরং তার হুটহাট সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ভীষণভাবে ক্ষুদ্ধ। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্বপ্রায়।
বাজার সংশ্লিষ্ট বলছেন, গভীর সংকটে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এমন পরিস্থিতি দেখেও কোনা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। মনে হচ্ছে পুঁজিবাজারের সংকট যেন দেখার কেউ নাই। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজার সংস্কারের লক্ষ্যে তদন্ত নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
তারা আরো বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংস্কার চলছে। এর মধ্যেই অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার আভাস মিলছে। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে ধস মেনে নেওয়া যায় না। অর্থনীতির বড় সংকটের মধ্যে থেকেও সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহায়তায় শ্রীলঙ্কার পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের পুঁজিবাজার উঠেছে রেকর্ড উচ্চতায়। অথচ দেশের পুঁজিবাজার ধারাবাহিক পতন মুখে হচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের মিশ্রাবস্থায় লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমানে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৬৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক .৯১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯২৩ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৫ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫০ টির, দর কমেছে ১৫৯ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৬ টির। ডিএসইতে ২৫৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৪৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩০৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৮৯ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৭ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৫ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৭৬ টির এবং ৩৬ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।