বিএসইসি’র কোন উদ্যোগেই স্থিতিশীলতায় ফিরছে না পুঁজিবাজারে
আলমগীর হোসেন ও শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে কোনোভাবেই আস্থা ফিরছে না। ফলে দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আহাজারী ততই বাড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে আস্থা ও তারল্য সংকটে হাহাকার করছে পুঁজিবাজার। তবে আস্থা সংকট কাটলে তারল্য কেটে যাবে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে বর্তমান পুঁজিবাজারে মুল সমস্যা আস্থা সংকট। বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজার দরপতন ঠেকাতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফলে ক্ষোভ আর হতাশা বাড়ছে রাশেদ মাকসুদ কমিশনের উপর।
মুনাফার আশায় এসে সর্বস্বান্ত হয়েছেন এমনটিই যেন বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নিয়তি। মাঝেমধ্যে কিছুটা সূচকের ওঠানামা থাকলেও হতাশা যেন এখানকার নিত্যদিনের চিত্র। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির এবং বিদেশী সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা হতাশ এখানে বিনিয়োগ করে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কারসাজির মাধ্যমে একটি পক্ষ মুনাফা করে।
পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের একটি শ্রেণিও সুবিধা পায়। যদিও ওই সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অন্য একটি অংশ লোকসানে পড়ে যায়। বিগত সরকারের সুবিধাভোগী পক্ষরা সুবিধা নিয়ে পুঁজিবাজার থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু এখন তারা নেই। তাই সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এখন কারা পুঁজিবাজার নিয়ে কারসাজি করছে। ঐ সিন্ডিকেট চক্র এখন বাজারে নেই। তা হলে কারসাজি করছে কারা।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সেসব উদ্যোগের কোনোটিতেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে না। দিন দিন এ আস্থা আরও তলানিতে ঠেকছে। এতে যেমন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে ব্রোকারেজ হাউসগুলোও লেনদেন খরার ফলে বিপাকে পড়েছে।
এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী হোসাইন আলী কাজী বলেন, ২০১০ সালে সর্বশান্ত হয়ে আজও পুঁজিবাজারে টিকে থেকে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার পেলাম না। আমরা বিনিয়োগকারীরা ভেবেছিলাম নতুন সরকার এলে সবকিছুর পাশাপাশি পুঁজিবাজারও ঠিক হয়ে যাবে। পুঁজিবাজারে আমাদের যে লোকসান হয়েছে, তা আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু নতুন সরকার ও নতুন কমিশন আসার পর থেকে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিনিয়োগকারীরা এই কমিশনের ওপর কোনো আস্থাই আনতে পারছেন না। এ ছাড়া কয়েকদিন পর পর যে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হচ্ছে, এতে সবাই আতঙ্কিত হয়েছেন।
এদিকে সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের মিশ্রাবস্থায় লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহ জুড়ে বেড়েছে টাকার পরিমাণে লেনদেন। তবে সপ্তাহটিতে ২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকার বাজার মূলধন কমেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা বা .৪০ শতাংশ।
সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ৩৪০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৩৯২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সপ্তাহটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ১৬১ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে। সপ্তাহটিতে ডিএসইতে ৩৯৮ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪০ টির, দর কমেছে ২০৮ টির এবং ৫০টির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯২.৩৮ পয়েন্ট বা ০.৬৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৫৯.৯১ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচক সিএসসিএক্স ৬২.৪১ পয়েন্ট বা ০.৭০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৯৭.১০ পয়েন্টে। অপর ২টি সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ সূচক ১০.৩ পয়েন্ট বা ০.৯২ শতাংশ কমে এবং সিএসআই সূচক ১.০৩ পয়েন্ট বা ০.১১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে- এক হাজার ১০৯.৮৩ পয়েন্টে এবং ৯৩৩.০৪ পয়েন্টে। এছাড়া, সিএসই-৩০ সূচক ১৭৫.৫৪ পয়েন্ট বা ১.৪৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯১৭.১৫ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩০৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১২০টি, কমেছে ১৫২টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির। সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি ৩৫ লাখ ৭১ হাজার ৪৩৪ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১৬০ কোটি ৫৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৬০ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ১২০ কোটি ১৯ লাখ ৭২ হাজার ৪২৫ টাকা বা ৭৪.৮৬ শতাংশ।