শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ‘কারসাজি’র ভীতিতে পুঁজিবাজার বিমুখ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। কারসাজির শেয়ারের দাপটে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা ভালো মৌল শেয়ারও বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম পড়ছে। টানা পতনের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমছে। তাদের লোকসান বাড়তে বাড়তে নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পতন ঠেকাতে নানা উদ্যোগও কোনো কাজে আসছে না। তারল্য সংকট এবং নতুন বিনিয়োগের অভাবে বাজারে থাকা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অজানা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এদিকে নতুন বছরের শুরুতে লেনদেন হওয়া ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ৮ কার্যদিবসই সূচকের পতন হয়েছে। চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসই সূচক কমেছে। এদিকে প্রতিনিয়ত পতন হওয়ায় পুঁজিবাজারে আগ্রহ হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। টানা দরপতনে অনেকে আর ভরসা রাখতে পারছেনা। এ আস্থাহীনতার কারণে পুঁজিবাজার আর আগের গতি ফিরে পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল সিদ্ধান্ত ও বিগত সরকারের লুটপাটই অব্যাহতভাবে পুঁজিবাজারে দরপতন হওয়ার কারণ। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি পাওয়ায় পুঁজিবাজারের ওপর একটা প্রভাব পড়েছে। এ থেকে বের হতে অনেক সময় লাগবে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় তারা বাজারে বিনিয়োগ করার আস্থা পাচ্ছেন না। অনেকে মার্জিন ঋণের খপ্পরে পড়ে ফোর্স সেলের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে ছেড়েছেন বাজার। বাজারে আগ্রহ ছিল বলেই অনেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু দেদারসে শেয়ারের দাম কমতে থাকায় মার্জিন ঋণের খপ্পরে পড়েন তারা। একদিকে মাঝারি বা খারাপ মানের শেয়ারের দাম কমায় টান পড়ছে ঋণের টাকায়। অন্যদিকে ফোর্স সেল হওয়ায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ভালো শেয়ারও। এতে করে সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।

এবিষয়ে মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশিকুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের সমস্যা এখনো কাটেনি। আরো নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়েছে- এর প্রভাব পড়ছে বাজারে। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর একের পর ভুলের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। বিনিয়োগকারীদের ভুল শেয়ারে বিনিয়োগ করা এখনো কমেনি। যার ফলে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দরপতন হচ্ছে।

তবে বিগত সরকারের লুটপাটকে দুষছেন ব্রোকারেজ মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি মোশতাক আহমেদ সাদেক বলেন, বিগত সরকার কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার কারণে পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে বাজার বের হতে পারছে না। বিনিয়োগকারীরা এখনো পুঁজিবাজারকে আস্থায় নিতে পারেনি। স্বৈরাচার সরকারের অনুগত লোক দিয়ে বিএসইসি নিয়ন্ত্রন করতো। এরপর তারা পুঁজিবাজার থেকে হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, এখানে মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীরা বাজারে লেনদেনে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না। অনেক বিও অ্যাকাউন্ট বহুদিন ধরে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। অনেকে আবার অ্যাকাউন্টের টাকা তুলে বাজার থেকে চলে গেছেন। সব মিলিয়ে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ভরসা কমে গেছে। এখন যা জরিমানা হচ্ছে তার বেশিরভাগই আগের কমিশনের। কারসাজির ৯৮ শতাংশ বিচার তারা করেননি, যা বর্তমান কমিশনকে এসে করতে হচ্ছে। অপরাধীদের সাজা না দিলে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরবে না।

ডিএসই’র সূত্র মতে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার পরিমানে লেনদেন বেড়েছে। দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৪২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৫৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৫ টির, দর কমেছে ১৮২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৯ টির। ডিএসইতে ৪০৬ কোটি ৭৬ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৫১ কোটি ১১ হাজার টাকা ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৪ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৩ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৮টির দর বেড়েছে, কমেছে ৭৫ টির এবং ৩০ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।