পুঁজিবাজার ভালো না হলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আশঙ্কা
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। বাজারে টিকে থাকার নানা কৌশল করেও টিকতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। ধৈর্য ধরার পাশাপাশি সমন্বয় করেও কিছু করতে পারছেন না তারা। যে কারণে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে বিনিয়োগকারী সংখ্যা। পতনের ধাক্কায় কমে গেছে বিও অ্যাকাউন্ট। কমে গেছে সক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। বাজার ভালো না হলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। কারণ চলতি সপ্তাহে গত পাঁচ কার্যদিবসে দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে।
এদিন সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরে লেনদেন হওয়া ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ৯ কার্যদিবসেই মূল্যসূচক কমলো। এমন টানা পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক সদস্য বলেন, পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা আস্থা সংকট। আস্থা সংকটের নেপথ্যে বিএসইসি হুটহাট সিদ্ধান্ত। ফলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা সংকট তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। যে কারণে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেই বাজারে বিক্রির চাপ বাড়ছে। আর বিক্রির চাপ বাড়ার কারণে দরপতন ঘটছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার ভালো না হলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে বলে মনে করেন বাজার তিনি।
মিজানুর রহমান নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বড় ধনের লোকসানের মধ্যে রয়েছি। প্রতিদিনিই ভাবি বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। সকালের দিকে বাজারে একটু ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ দিন দরপতনই ঘটে। এভাবে চলতে থাকলে বাজারের কোনো আস্থা থাকার কথা না। দিন যত যাচ্ছে আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হতাশা ততো বাড়ছে।
জানা গেছে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসই’র ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ০.১৬ শতাংশ বা ৮.৫৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৩৩.৯২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬.৬৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৫০.৬৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৪.০৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৯৪.২৭ পয়েন্টে।
এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৯ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪১ টির, কমেছে ১৯৬ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬২ টির। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে আজ ৩৫.৩৩ শতাংশ শেয়ারের দর বেড়েছে। এদিন ডিএসইতে ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ২২ হাজার ৪২৭টি শেয়ার ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৬৪ বার হাতবদল হয়েছে।
আজ দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৬৩ কোটি ৬৮ লাখ ১ হাজার টাকা। গত কার্যদিবসে অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি ডিএসই’র ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ০.১৬ শতাংশ বা ৮.৩৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করেছে ৫ হাজার ১৪২.৫১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১.০২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করেছে ১ হাজার ১৫৭.৩২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৬.১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করেছে ১ হাজার ৮৯৮.৩০ পয়েন্টে।
এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৬ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছিল ১৪৫ টির, কমেছিল ১৮২ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছিল ৬৯ টির। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে গত কার্যদিবসে ৩৬.৬১ শতাংশ শেয়ারের দর বেড়েছিল। ডিএসইতে ১৬ কোটি ৯০ লাখ ৬২ হাজার ৭২৫টি শেয়ার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৪৯ বার হাতবদল হয়েছিল। আজ দিন শেষে লেনদেন হয়েছিল ৪০৬ কোটি ৭৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ লেনদেন কমেছে ৪৩ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
এদিকে আজ দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্য সূচক সিএএসপিআই ০.২৫ শতাংশ বা ৩৬.০১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৩৫৩.৮১ পয়েন্টে। এদিন লেনদেন হওয়া ১৭৮ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৫ টির, কমেছে ৯৭ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬ টির। আজ দিন শেষে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৭২ লাখ ৮ হাজার ৬১৭ টাকা।