মহাসচিবের পদ হারাতে পারে ফখরুল!
মান্না আতোয়ার, ঢাকা: সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ সকল কর্মসূচি এবং ৫ জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে যথাযথ ভূমিকা না রাখা, সারা দেশের নেতাকর্মীদের সাথে দুরত্ব তৈরি করা। এছাড়া দলের সাংগাঠনিক দুর্বলতা দূর করতে ব্যর্থ হওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে দলের ভিতরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আন্দোলনের মাঠে নেতাকর্মীদের স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ না করাতে পারা এবং প্রহসনের নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় দলের মধ্যে ইতিমধ্যে তার যোগ্যতা নিয়ে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আলোচনা-সমালোচনাসহ বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলা শুরু করে দিয়েছে।
নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্য়ন্ত তিনি অজ্ঞাত স্থানে নিজেকে আত্নগোপনে রেখেছেন। শুধু মাঝে মধ্যে তালেবানি কায়দায় ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কিছু বার্তা পাঠান দায়সার হিসেবে। তার এ হেন কার্যকলাপে মনে হয় তিনি জঙ্গী কোন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
এমনকি নির্বাচনের পর কূটনীতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা এবং ১৮ দলের বৈঠকেও দেখা যায়নি তাকে। এখন শুধু বিভিন্ন ইস্যুতে ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে বিবৃতি দেয়ার মধ্যে তার কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে।
বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীরা যখন মাঠে থেকে আন্দোলন করছে তখন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কেন লুকিয়ে আছেন তা নিয়ে প্রশ্ন করেন তারেক রহমান। মির্জা ফখরুলের এই ভূমিকাতে খালেদা জিয়ার নির্দেশ/সম্মতি থাকতে পারে বলে জবাব দেন শমসের মবিন।
পাল্টা প্রশ্নে তারেক বলেন, “এতে কী কোন লাভ হচ্ছে?” মির্জা ফখরুলকে দিয়ে আন্দোলনও হচ্ছে না আর উনি কোন বক্তব্যও দিচ্ছেন না বলে তারেক বিস্ময় প্রকাশ করেন।এতে তারেক ফখরুলের প্রতি যথেষ্ট ক্ষুদ্ধ হয়েছেন।
দলীয় বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, মির্জা ফখরুলের কর্মকান্ডে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বেশ ক্ষুব্ধ। নির্বাচনের কয়েক দিন পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্কাইপেতে এক ভিডিও কনফারেন্সে তারেক রহমান মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভের কথা জানান। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিরের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে খালেদার প্রতি অনুরোধ জানান তার বড় ছেলে তারেক। তবে বিএনপির চেয়ারপারসন এখনো পর্যন্ত তার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ওপরই আস্থা রাখছেন। তিনি এ নিয়ে মির্জা ফখরুলের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারেক রহমানের অতি আস্থাভাজন ও যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিএনপি’র এক শীর্ষ নেতার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফখরুলের আচরণে তারেক রহমান দু:খ পেয়েছে। তিনি কেন এমন আচরন করছেন তা বোধগম্য নয়।
তার এই আত্মগোপনে থাকাকে কেন্দ্র করে দল বির্পয়ের মুখে পড়েছে। তিনি যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন বা দলীয় কারনে গ্রেফতার হতে না চান তাহলে তার এমন দায়িত্বশীল পদে থাকার অধিকার নেই। তিনি ইচ্ছা করলে পদ থেকে অব্যাহতি নিতে পারেন। ফোন না ধরার কারণে তারেক তার উপর এতই ক্ষুদ্ধ যে ফখরুল যে কোন সময় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের পদ হারাবেন।
নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কারণ খুঁজতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিএনপির শীর্ষনেতারা সারা দেশে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন বলে জানা গেছে। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করলে বিএনপির চেয়রাপারসন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেন।খালেদার এই সিদ্ধান্ত অনেক সিনিয়র নেতা মেনে নিতে না পারলেও বহিষ্কৃত হওয়ার ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ বিরোধিতা করনেনি।
সবার কাছে সজ্জন ও স্বচ্ছ ইমেজ থাকলেও দায়িত্ব নেয়ার প্রায় তিন বছর পরও সারা দেশে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা দূর করতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেননি মির্জা ফখরুল। তার সাংগঠনিক কার্যক্রম শুধু বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবশে বক্তব্য দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। নির্বাচনের আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও কঠোর আত্মগোপনে থাকা নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তাকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন এবং আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর তারেক রহমানের সঙ্গে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার কথা হয়েছে। কয়েকজন নেতা তারেক রহমানের কাছে মির্জা ফখরুলের সাংগঠনিক যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একই সঙ্গে যোগ্য কাউকে এই দায়িত্ব দেয়ার অনুরোধ করেন তারা। তবে তারেক রহমান তাদেরকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেন। বিএনপিতে ফখরুলবিরোধী হিসেবে পরিচিত এক নেতা বলেন, আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পেছনে বড় দায় হচ্ছে সারা দেশে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা।
আন্দোলনে নেতা-কর্মীরা মাঠে নামেনি।এই নেতা প্রশ্ন তোলেন, তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর সংগঠনকে কতটুকু শক্তিশালী করেছেন? তার অনুগত নেতাদের দিয়ে ঢাকা মহানগরের কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু সেই ঢাকাতেই তেমন কোনো আন্দোলন হয়নি। এসবের দায় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এড়াতে পারেন না।