সরকার আন্তরিকতায় পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার পথে
ফাতিমা জাহান : পুঁজিবাজার সুদিনের হাতছানি দিতে শুরু করছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা স্বস্তিতে রয়েছেন। দিন দিন নতুন নতুন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তেমনি বাড়ছে বাজারের গতিশীলতা। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সুচক ৪ হাজার ৯৯৩ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিতে নতুন করে শেয়ার ক্রয় করছেন।
ফলে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি বাড়ছে। তেমনি সরগরম হতে শুরু করেছে সিকিউরিটিজ হাউজগুলো। এভাবে আরো কয়েক কার্যদিবস বাজার চলতে থাকলে পুন:বিনিয়োগের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা পূর্বের ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তেমনি বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত উদ্যোগে বাজার উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
দৈনিক লেনদেন, বাজার মূলধন ধারাবাহিক বৃদ্ধির ফলে সূচকেও পড়ছে ইতিবাচক প্রভাব। ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বরের পর এখন পর্যন্ত সূচক পাঁচ হাজারের ঘরে পৌছাতে পারেনি। বর্তমানে সূচকের অবস্থান পাঁচ হাজার থেকে মাত্র ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শিগগিরই সূচক পাঁচ হাজারের ঘরে উন্নীত হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সরকার যে কোন মূল্যে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখবে। বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে বুঝে মুনে বিনিয়োগ করা ভাল। পুঁজিবাজারে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। যে কোন মূল্যে বাজার স্থিতিশীল রেখেই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য পুঁজিবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি রাষ্ট্রের উন্নতির পেছনে প্ুঁজিবাজার বড় অবদান রাখে। আমাদের বাজারও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। তিনি আরও বলেন, আগামীতে এই পুঁজিবাজার জিডিপিতে আরও বড় ভূমিকা রাখবে।
নাম প্রকাশে অনিশ্চিুক এক সিকিউরিটিজ হাউজের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারনে বাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে সরকার যে কোন মুল্যে পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখবে। তেমনি পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করে ক্ষত শুকিয়ে দেবে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীলতা থাকায় অনেক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধীরে ধীরে আস্থার সঞ্চার হচ্ছে। ধারাবাহিক উত্থানের কারণে দেশের শেয়ারবাজার অনেকটাই বিনিয়োগ উপযোগী হয়ে উঠেছে। যার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশিরাও বিনিয়োগে সক্রিয় হচ্ছেন।
মর্ডান সিকিউরিটিজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূরই নাহরিন দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকারও রেগুলেটরি বডি কাজ করছে। বাজারের বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োগের উপুযক্ত সময়। পাশাপাশি সামনে সুচক আরো বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগকারীরা যদি সচেতন থাকে তাহলে বাজার বড় ধরনের কোন পতন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার জন্য ‘ফিনেন্সিয়াল লিটারেসি গ্রোগ্রাম’ যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
এ বিষয়ে এম সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নূরুল আজম বলেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। বাজারের এ গতি অব্যাহত থাকলে আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হবে। সেই সঙ্গে সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও ছিল সন্তোষজনক। যে কারণে পুঁজিবাজারে একটি ইতিবাচক চিত্র দেখা যাচ্ছে।
একই প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, দীর্ঘদিন থেকে আমরা একটি স্থিতিশিল বাজার দেখতে পাচ্ছি। এটা ভাল লক্ষণ। তাছাড়া বাজারে বেশ কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিক উত্থান বা পতন দেখা যাচ্ছে না, যার ফলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী এ্যাড. মাহামুদুল আলম বলেন, সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে আন্তরিক। আর আন্তরিকতার ফল বাজারে দেখা যাচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারীরা বুঝে মুনে বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতের শেয়ারে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময় বলে তিনি মন্তব্য করেন।