libra family copyফয়সাল মেহেদী : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের হিসাব বছরের প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হলে তিন দিন পূর্বে পর্ষদ (বোর্ড) সভার ঘোষণা দিতে হয়। আর ওই ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে এবং সময়ে সভা করতে হয় পরিচালনা পর্ষদকে। অথচ লিস্টিং রেগুলেশনের কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সম্প্রতি পর্ষদ সভা (বোর্ড মিটিং) সম্পন্ন করে ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বস্ত্র খাতের ফ্যামিলিটেক্স (বিডি) লিমিটেড এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের লিবরা ইনফিউশনস লিমিটেড।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশন- ২০১৫ এর ধারা ১৬ এর উপ-ধারা ১-এ বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির আর্থিক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করণ এবং অন্তর্বর্তী কালীন ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত বোর্ড সভার জন্য নির্ধারিত তারিখের তিন দিন পূর্বে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং কমিশনকে জানাতে হবে। যা ২০১৫ সালের ১২ জুলাই বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এ আইন ভেঙ্গে ফ্যামিলিটেক্স ও লিবরা ইনফিউশনস স্টক এক্সচেঞ্জকে বোর্ড সভা করার কোনো খবর না জানিয়েই সম্প্রতি অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ সংক্রান্ত বোর্ড সভা সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে ওই আর্থিক প্রতিবেদন ডিএসইর মাধ্যমে প্রকাশ করে কোম্পানি দু’টি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ২ ফেব্রুয়ারি লিবরা ইনফিউশনসের চলতি অর্থবছরের অর্ধবার্ষিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদন সংক্রান্ত বোর্ড সভা সম্পন্ন হয়। যা ৫ ফেব্রুয়ারি ডিএসই’র মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত ১৬ নভেম্বর লিবরা ইনফিউশনসের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিএসই। এদিকে ১২ ফেব্রুয়ারি ফ্যামিলিটেক্সের চলতি অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন ডিএসই’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। তবে কোম্পানি দু’টির বোর্ড সভার তারিখ নির্ধারণ সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা ডিএসই’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি এ কোম্পানি দু’টির নিজস্ব ওয়েবসাইটেও এ সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কোম্পানি দু’টির সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বোর্ড সভার ঘোষণা না দিয়ে বোর্ড সভা সম্পন্ন করেছে এমন অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের উচিৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (বিএসইসি) অভিযোগ করা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরি বলেন, ২০১০ সালের ধসের পর থেকে তিলে তিলে বিনিয়োগকারীরা সবস্ব হারিয়ে পথে বসে যাচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে নীতি-নির্ধারনী মহলের কোন ভ্রক্ষেপই নেই। বরং উল্টো কোম্পানিগুলোর অনিয়মে সহযোগীতা করছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এর আগেও ডিএসইর বিরুদ্ধে কোম্পানিগুলোর অনিয়ম প্রকাশে লুকোচুরি করার অভিযোগ ওঠেছে। কোম্পানিগুলো আইন লঙ্ঘণ করে বোর্ড সভা করছে, অথচ ডিএসই কর্তৃপক্ষ এর কোনো প্রতিকার না করেই বোর্ডসভার তথ্য প্রকাশ করছে। এটা কোম্পানিগুলোর অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়ার শামিল। তাই তিনি অতিদ্রুত এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসইসির প্রতি আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে জানতে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে.এ.এম মাজেদুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মো. সাইফুর রহমান দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে কমিশনের কাছে এ ধরনের অভিযোগ এসেছে বলে আমার জানা নেই।’