উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আনসার-ভিডিপি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার : প্রধানমন্ত্রী
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির যে কোন প্রয়োজনে আনসারবাহিনী সাহসকিতার সঙ্গে সাড়া দিয়েছে। এই বাহিনীর সদস্যদের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নাশকতা ও মাদক পাচারের বিরুদ্ধে সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে সক্রিয় দায়িত্ব পালন করতে আনসার বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমিতে রবিবার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৭তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে আনসার-ভিডিপি একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নাজিম উদ্দীন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানায় আনসার বাহিনীর একটি চৌকস দল। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার পর একটি খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর আনসার বাহিনীর সদস্যরা কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন। কুচকাওয়াজের পর কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে আনসার সদস্যদের পদক পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী মাটি ও মানুষের বাহিনী। জরুরি প্রয়োজনে সরকারের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে এ বাহিনী বারবার রেখেছে তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। সর্ববৃহৎ ও সুশৃঙ্খল এ বাহিনী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের প্রয়োজনে সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে এ বাহিনীর স্বতঃস্ফুর্ত ও ব্যাপক অংশগ্রহণ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। তাদের কাছে রক্ষিত ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেল ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল শক্তি।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ দিনে ১২জন বীর আনসার সদস্যকে স্মরণ করেন। যারা ১৯৭১ সালে মেহেরপুরের আম্র কাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে শপথ গ্রহণকালে গার্ড অব অনার প্রদান করেছিলেন। স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিটি ক্ষেত্রে আনসার সদস্যরা সফলতার পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় সংকটকালে এবং জরুরি মুহূর্তে কাজ করে এ বাহিনী সরকারের এক নির্ভরযোগ্য অংশ হিসেবে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন ছাড়াও অপারেশন রেলরক্ষা, মহাসড়কে নাশকতা রোধ এবং মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ রুখতে এ বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব পালনকালে জননিরাপত্তা বিধান ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আনসারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকালে যারা জীবন দিয়েছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন তিনি।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার অংশীদার আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। বিশেষ করে শিল্পকারখানা, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা সদস্যের সতর্ক উপস্থিতি দেশের অর্থনীতির চাকাকে করেছে গতিশীল।
বিমানবন্দর নিরাপত্তায় গঠিত এভসেক (এভিয়েসন সিকিউরিটি) এ আনসার বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি এ বাহিনীতে বিশেষ ইউনিট গঠন করা হয়েছে। যা হলি আর্টিজান মর্মান্তিক ঘটনার পরবর্তীকালে কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং কূটনৈতিক মহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রটেকশনের জন্য দুটি আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আনসার ও ভিডিপি উন্নয়নে সরকারের কাজ অব্যাহত থাকবে।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার ধারাবাহিকতা ব্যাটালিয়ন আনসারদের চাকরি ৯ বছরের পরিবর্তে ৬ বছরে স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আনসারদের সুযোগ-সুবিধা ও কল্যাণ প্রতিবছরই বিভিন্নভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫টি মডেল আনসার ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি অস্থায়ী ব্যাটালিন আনসার ও অঙ্গীভূত আনসারদের বেতন-ভাতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে ভিডিপি’র দলনেতা ও দলনেত্রীদের পদসংখ্যা ৮ হাজার ৫ শত থেকে ১৫ হাজার ২ শত ৪৫ জনে উন্নীত করা হয়েছে। শহর এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোড়দার করার লক্ষ্যে ওয়ার্ড দলনেতা ও দলনেত্রীর পদ বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর সাহসিকতা ও কর্মদক্ষতা বর্তমানে সর্বজনস্বীকৃত। দুটি মহিলা ব্যাটালিয়নের সদস্যগণ দেশের সীমান্তে নাশকতা রোধ ও অবৈধ চোরাচালান দমনে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবে দায়িত্ব পালন করছে; যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
কর্মমুখী ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবসম্পদকে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা এ বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ বাহিনীর সদস্যগণ বর্তমানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করেছে এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে এ বাহিনী সারাদেশে এক বিশাল পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক। ব্যাংকটি সদস্যদের আর্থিক উন্নয়নসহ নারী ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদান রাখছে। প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও উন্নয়ন ও ঋণ গ্রহণ এর অপূর্ব সম্মিলনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে এ ব্যাংক কাজ করছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন কি করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। বিশ্বে এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা নিম্নমধ্যবিত্তের দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের প্রবৃদ্ধি এখন ৭ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত–সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলবো।
জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সততা, শৃঙ্খলা, আন্তরিকতা ও সাহসের সঙ্গে কাজ করার জন্য আনসার সদস্যদের প্রতি আহবান জানান তিনি।