দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডের ফ্যাক্টরীকে উন্নীত করে এর বিপণন চ্যানেলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে মাইনোরি বাংলাদেশ কর্তৃক মনোনীত তিনজন নতুন পরিচালক। এতে করে কোম্পানিটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে বাজারের সর্বত্রই পোছে দিতে কাজ করেছে নতুন এই বোর্ড। এরই মধ্যে রাজধানীতে একটি বিপণন ক্রেন্দ্রও স্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মাইনোরী হচ্ছে জাপানি ফার্মিং কোম্পানি মাইনোরি কো লিমিটেডের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

ফুড কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরী এবং পরিচালক আফসানা তারান্নুম এবং লুবাবা তাবাসসুমের স্থলাভিষিক্ত হয়ে নতুন করে আসেন মাইনরি বাংলাদেশ, মিয়া মামুন, মোঃ আফজাল হোসেন এবং সিদরাতুল মাহাবুব হাসান। এই তিন পরিচালককে ফু-ওয়াং ফুড-এর বোর্ড মনোনীত করেন। বর্তমানে ফুড কোম্পানির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুন। মাইনোরি বাংলাদেশ এর আগে ফু-ওয়াং ফুডের প্রাক্তন উদ্যোক্তা-পরিচালকের ৭.৬১ শতাংশ শেয়ার কিনেছিল।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে কোম্পানির উন্নয়নে আরও ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার শর্তে নতুন মালিককে অনুমোদন দেয়।

ফু-ওয়াং ফুডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগের বোর্ডে বেশ কিছু অনিয়ম হয়েছে। এছাড়াও কোম্পানিটির উৎপাদন ও বিক্রয় ব্যবস্থা স্থবির থাকায় এ কোম্পানির কোনো পণ্য বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নতুন বোর্ড কোম্পানির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে কারখানার যন্ত্রপাতি উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন পণ্যের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে।

এ ছাড়া মার্কেটিং চ্যানেলকে শক্তিশালী করতে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটির একটি বিক্রয় কেন্দ্র রাজধানীতে স্থাপন করা হয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে সারাদেশে চালু করা হবে। কোম্পানির একজন নতুন পরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন এর আগে বলেছিলেন, “ফু-ওয়াং ফুডের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এর সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।”

৩০ মার্চ’২২ নতুন বোর্ডের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরিক্ষীত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তৃতীয় প্রান্তিন বা নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির রাজস্ব ৫৮ শতাংশ বেড়ে ৯৩.৫২ কোটি টাকা হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে এর নিট মুনাফা ৫৬ শতাংশ কমে ১.২৫ কোটি টাকা হয়েছে। এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, গত তিন মাসে পণ্য বিতরণ ও বিক্রির খরচ বেড়েছে। এছাড়া কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা কমেছে।

মাইনোরি বাংলাদেশের বাগদানের আগে, বিএসইসি ফু-ওয়াং বোর্ডের পুনর্গঠন করে এবং পাঁচটি স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করেছিল কারণ পূর্ববর্তী বোর্ড ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ারহোল্ডিং মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছিল।

সেই বোর্ডের অধীনে, ২০২১ অর্থ বছরের জন্য কোম্পানির হিসাব নিরীক্ষিত হয়েছিল। অডিটর ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনার আর্থিক বছরের ফু-ওয়াং ফুডের অ্যাকাউন্টে গুরুতর অসঙ্গতি চিহ্নিত করেছে।

এর আগে, রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কো কোম্পানির বার্ষিক হিসাব ২০১২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সাতবার অডিট করেছে। এর মধ্যে, ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনার শুধুমাত্র ২০১৬-এর জন্য হিসাব নিরীক্ষা করেছে। কিন্তু কোনো অডিটর কোনো অনিয়ম পায়নি।

২০২১-এর নিরীক্ষা প্রতিবেদনে নিরীক্ষক একটি মতামতে বলেছেন, কোম্পানিটি ৮৯ কোটি টাকার বিক্রয় দেখিয়েছে। তবে এটি কোম্পানিটির বিক্রয় সংক্রান্ত কোনও নথিতে উল্ল্যেখ করেনি। এদিকে, কোম্পানিটি তার গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রাপ্য ৫৩.১৫ কোটি টাকা উল্লেখ করেছে। কিন্তু ৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকার ঋণখেলাপিদের কোনো তালিকা দিতে পারেনি। বিপরীতে, কোম্পানির দেওয়া ঋণখেলাপিদের তালিকার মধ্যে অডিটর মাত্র ০.৩৮ কোটি টাকা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।

এছাড়া বেতনের বিপরীতে অগ্রিম দেওয়া ০.২৮ কোটি টাকা, ব্রিস্টি বিস্কুট ফ্যাক্টরিকে দেওয়া ০.১৯ কোটি টাকা, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ফু-ওয়াং বেভারেজকে দেওয়া ৮.৪১ কোটি টাকা এবং বেতনের বিপরীতে দেওয়া ১.৩২ কোটি টাকার বিপরীতে কোনো নথি ও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেখাতে পারেনি।

কোম্পানির আরেক কর্মকর্তা বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী অডিটরের ফলাফলগুলো সমাধান করা হচ্ছে। কোম্পানিটি ২০০০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটি ২০১৮ সাল পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের শুধুমাত্র স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে। নিয়ন্ত্রক দ্বারা ডিভিডেন্ড নীতি সংশোধন করার পর, কোম্পানিটি ২০১৯ সালে শুধুমাত্র ২ শতাংশ ক্যাশ, ২০২০ সালে ১.৬৫ শতাংশ ক্যাশ এবং ২০২১ এ একই ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছিল৷