du-1দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : ডাকসুসহ সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অপরাজেয় বাংলায় র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।

শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রীকে বলব, ক্যাম্পাসে যদি গণতন্ত্র চর্চা, সুন্দর ও চমৎকার পরিবেশ গড়ে তুথে চান তাহলে ডাকসুসহ সকল ছাত্র সংসদে নির্বাচন দেওয়া ব্যবস্থা করুন। নির্বাচন যদি থাকে যার প্রার্থী হবে তারা ভাববে আমি যদি খারাপ আচরণ করি তাহলে সাধারণ ভোটাররা আমাকে ভোট দিবে না। সে অমনিতেই সংশোধন হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকে ২৫ বছরে প্রায় ৫০ জন ভিপি ও জিএস হতো। অন্যান্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও এমনটা হতো। জাতীয় রাজনীতে নেতৃত্ব দিতে পারত। ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকার কারণে এই পথটা বন্ধ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় কর্তৃপক্ষ ও কলেজের কর্তৃপক্ষকে বলে উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী গণতন্ত্র চর্চার জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।’

নেত্রীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে : ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, নেত্রীকে বিতর্কিত করবেন না। অবশ্যই তা করতে হবে, নেত্রীকে বিতর্কের ঊর্ধে্ব রাখতে হবে, ছাত্রলীগকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।

ছাত্রলীগের নেতাদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে কমিটি করতে হবে। কমিটিতে যাতে নিয়মিত ছাত্র থাকে সেই ধারা শুরু হয়েছে। ত্যাগী-কর্মীরা যেন কোণঠাসা না হয়। পকেট কমিটি যেন না হয়। এটা আমি বিশেষভাবে বলছি। আজকে অমুকের এই ভাগ, অমুকের এই ভাগ তাহলে অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে।আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, একজনের একভাগ আরেক জনের এই ভাগ। এই গ্রুপ, ভাগাভাগি ছাত্রলীগে চলবে না। এটা চলতে দেওয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগওক মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্রলীগকে সুনামের থলিতে হাঁটতে হবে। তোমাদের মেধা, শ্রম দিয়ে ছাত্রলীগকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় করতে তুলতে হবে। মনে রাথতে হবে, অনুপ্রবেশকারী, পরগাছামুক্ত ছাত্রলীগ চাই। ২০১৭ সালে অঙ্গীকার অনুপ্রবেশকারী ও পরগাছামুক্ত ছাত্রলীগ চাই। এরাই হচ্ছে ছাত্রলীগের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান বাধা। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটি গঠনের সময় সতর্ক থাকতে হবে। দলের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা সৃষ্টি করে। সমস্যা সৃষ্টি করে গুটি কয়েক পরগাছা। আর বদনাম হয় গোটা পার্টির, বদনাম হয় শেখ হাসিনা সরকারের।’

সম্প্রদায়িক উগ্রবাদ প্রতিহত করা নতুন বছরের চ্যালেঞ্জ : ছাত্রলীগ ও দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘২০১৭ সালে নতুন বছরে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ। এটাই আমাদের উন্নয়নের মহাসড়কে প্রধান বাধা। কাজেই এই চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে হবে। সকল বাধা অতিক্রম করে শপথ নিতে হবে শেখ হাসিনার আমরা এই সম্প্রদাকি অপশক্তিকে প্রতিহত করব, প্রতিরোধ করব, পরাজিত করবো।’
‘কথায় কথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ও বন্ধ থাকা চলবে না’ : ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজেক কথায় কথায় কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়। এটা অশুভ প্রবণতা, এটা তাদের চরম ব্যর্থতা। যদি অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অস্বভাবিক হয়, সেটার জন্য আমাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা আছে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা আছে। কেউ গোলমাল করতে তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কোনো অজুহাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দষ্টকালের জন্য বন্ধ করে অগণিত ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে দেওয়া যাবে না। এটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সিন্ডিকেটের কাজ নয়। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ও বন্ধ থাকা চলবে না। এটা যারা করে তাদের ব্যর্থতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘শাহজালাল ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’

‘এটা হয় না সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের দোষ কী। মাথাব্যথা বলে বলে মাথা কেটে ফেলব এটা হয় না’, উল্লেখ করেন কাদের।

বিএনপি এখন পথ হারিয়ে দিশেহারা : বঙ্গবন্ধু পরিবারকে অনুসরণ করার জন্য ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তোমাদের অন্য কোথায় যাওয়া লাগবে না। শেখ হাসিনার হওয়া ভবন নেই, তার পরিবারের খাওয়া ভবন নেই।’

বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আজকে তাদের বুদ্ধিজীবীরা বলেন ‘বিএনপি হাঁটুভাঙ্গা দল। তারা বলে ফেলে আসা বছরের সবচেয়ে ব্যর্থ দল হচ্ছে বিএনপি।’ আমি বলি, বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। শুধু নালিশ করে। নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনের পর আগামী নির্বাচনের জয়ের আশা বিলীন হয়ে গেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে নাসিক নির্বাচনে হেরে যাওয়া পরে বিএনপি এখন পথ হারিয়ে দিশেহারা। পথ হারিয়ে পথিক। এই দিশেহারা পথিক আবোল-তাবোল বকছে। তার মিথ্যাচার করছে। আমি সহকর্মীদের বলি তাদের সকল প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দরকার নেই।’

বক্তব্য শেষে ছাত্রলীগের র‌্যালির উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, একেএম এনামুল হক শামীম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, উপপ্রচার বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আব্দুল মান্নান, বাহলুল মজনু চুন্নু, ইসহাক আলী খান পান্না, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, বাহাদুর বেপারী, লিয়াকত শিকদার, মাহমুদুল হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, বদিউজ্জামান সোহাগ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান, মোতাহের হোসেন প্রিন্স।
জাতীয় সঙ্গীত, ছাত্রলীগের থিম সং ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করেন ছাত্রলীগের সংস্কৃতিকর্মীরা। আলোচনা শেষে বেলুন উড়িয়ে র‌্যালি উদ্বোধন করেন ওবায়দুল কাদের। র‌্যালিতে অংশ নেন সারাদেশ থেকে আসা হাজার হাজার ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। র‍্যালিটি শাহবাগ, মৎস্যভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন, জিপিও হয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ তে এসে শেষ হয়।