apexদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি এপেক্স ফুডস লোকসান থেকে হঠাৎ করে মুনাফায় ফিরছে। আগের অর্থবছরের ন্যায় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের ব্যবসায়ও রিজার্ভ থেকে লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাপেক্স ফুডসের পরিচালনা পর্ষদ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে অ্যাপেক্স ফুডসের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৫৬ টাকা। এর বিপরীতে কোম্পানির পর্ষদ ২০ শতাংশ হিসাবে প্রতিটি শেয়ারে ২ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যাতে প্রতিটি শেয়ারে ৪৪ পয়সা রিজার্ভ থেকে দিতে হবে।

৫ কোট ৭০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের অ্যাপেক্স ফুডসে ৩১ কোটি ২ লাখ টাকার রিজার্ভ রয়েছে। অর্থাৎ বিগত বছরগুলোতে মুনাফার তুলনায় কম লভ্যাংশ দিয়ে এ রিজার্ভ সংরক্ষণ করা হয়েছে। যেখানে থেকে এ বছর ২৫ লাখ টাকা লভ্যাংশ আকারে প্রদান করা হবে।

১৯৮১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ২.৩২ টাকা। আর এর বিপরীতেও ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ারপ্রতি ২ টাকা করে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার লভ্যাংশ রিজার্ভ থেকে দিয়েছিল।

এদিকে রফতানি কমলেও খরচ কমিয়ে মুনাফায় ফিরেছে এপেক্স ফুডস লিমিটেড। রফতানি কমে যাওয়ায় আগের বছর লোকসানে পড়লেও ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৭ হিসাব বছরে প্রায় ৮৯ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা দেখিয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি।

কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় এ বছরও কোম্পানির বিক্রি কমেছে। আগের বছর লোকসানে পড়লেও এবার উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট ছিল তারা।

এ কারণেই বছর শেষে মুনাফায় ফিরতে সক্ষম হয় এপেক্স ফুডস। এর বাইরে তাদের চিংড়ির চাহিদা বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তারা।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৭ হিসাব বছরে কর-পরবর্তী প্রায় ৮৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা মুনাফা করেছে এপেক্স ফুডস। যদিও আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী লোকসান ছিল ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সর্বশেষ হিসাব বছরে এর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৫৬ পয়সা। যেখানে আগের বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ২ টাকা ৩২ পয়সা। ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকা ১০ পয়সা।

এদিকে গত সপ্তাহে পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বশেষ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করেছে এপেক্স ফুড। লভ্যাংশ, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য এজেন্ডা অনুমোদনে আগামী ২১ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ নভেম্বর।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪-১৫ হিসাব বছর থেকেই তাদের রফতানি আয় নিম্নমুখী। সে বছর কোম্পানির রফতানি আয় আগের বছরের অর্থাত্ ২০১৩-১৪ হিসাব বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ কমে ২৭৫ কোটি টাকায় নেমে আসে। এতে পূর্ববর্তী অন্তত পাঁচ বছরের ইতিহাসে কোম্পানিটি প্রথমবারের মতো পরিচালন লোকসানে পড়ে।

সে বছর এপেক্স ফুডসের পরিচালন লোকসান হয় ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অবশ্য এপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং মিলস ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডে (সিডিবিএল) বিনিয়োগের বিপরীতে পাওয়া লভ্যাংশ আয়ে শেষ পর্যন্ত নিট মুনাফায় থাকে কোম্পানিটি। ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে রফতানি আরো কমে দাঁড়ায় ২০৩ কোটি টাকা। সে হিসাব বছরে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা নিট লোকসান গুনে তারা। সর্বশেষ হিসাব বছরেও রফতানি কমেছে। তবে ব্যয় কমিয়ে মুনাফায় ফিরেছে কোম্পানিটি।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় বিদায়ী অর্থবছরেও সামগ্রিকভাবে চিংড়ি খাতের রফতানি আয় আগের তুলনায় কমে গেছে। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে ৪৫ কোটি ডলার রফতানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৪৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি কমেছে দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে রফতানির পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রফতানি কমেছে দশমিক ৫৬ শতাংশ।

১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এপেক্স ফুডস লিমিটেড শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান। হিমায়িত ও প্রক্রিয়াজাত চিংড়ি রফতানিতে দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান তারাই। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশ এ কোম্পানির হিমায়িত চিংড়ির প্রধান বাজার। তবে কয়েক বছর ধরে দেশের চিংড়ি শিল্প বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে।

ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সস্তা ‘ভেনামি’ চিংড়ির কারণে ‘ব্ল্যাক টাইগার’ প্রজাতির চিংড়ির বিক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় এ খাতের কোম্পানিগুলোর আয় কমতে দেখা গেছে।

বর্তমানে চিংড়ি রফতানিতে উদ্বুদ্ধ করতে সরকার ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়। তবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো চাপে আছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। রফতানি আয়ের অন্তত ৯০ শতাংশই ব্যয় হয় উৎপাদনে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত এপেক্স ফুডসের পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে ৩৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালক, প্রতিষ্ঠান ৭ দশমিক ৯২ ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের হাতে রয়েছে ৫৩ দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার।