এরশাদ খালেদামান্না আতোয়ার, ঢাকা: বিএনপি‘র চেয়ারপারসন ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সর্বদলীয় সরকারের শরীক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গৃহবন্দী হয়ে আছেন।

খালেদা জিয়া তার নিজের বাড়িতে বন্দি অবস্থায় আবার এরশাদ চিকিৎসার নামে সামরিক হাসপাতালে বন্দী জীবনযাপন করছেন। গনতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা কর্মসূচির জন্য খালেদা তার বাসভবনে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। আর খালেদাকে অবরুদ্ধ রাখার কারণে গৃহবন্দী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে এরশাদ চলমান নির্বাচনকে বয়কট করার কারণে অসুস্থ না হয়েও বন্দী জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তবে এ বন্দী জীবনযাপন তার নাটকীয়তা নাকি সত্যি তা এখনো সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে না। অন্যদিকে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদার ৭৯ নম্বর সড়কের ‘ফিরোজা’ নামের বাসভবনকে ঘিরে র‌্যাব-পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে।

সকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাশের রাস্তা থেকে বালুভর্তি ট্রাক এনে দুই পাশে আড়াআড়িভাবে রাখা হয়। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয় যাতে নিরাপত্তার বিঘ্ন না ঘটে।

পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই দিনাতিপাট কাটছে খালেদা জিয়ার। অন্যদিকে হাসপাতালে বসে গলফ খেলে দিন পার করতে হচ্ছে এরশাদের। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সারা দেশের হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

তাই বিগত বছর জুড়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মীরা তেমন কোন ভূমিকা রাখতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আবার অনেকে গ্রেফতার এড়াতে সরকারের সাথে আঁতাতে যখন ব্যর্থ হয়েছে তখন বেছে নিয়েছে আত্মগোপনের পথ।

এদিকে বছর শেষের দু’দিনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কলঙ্কিত হয়েছে।এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম ঘটে গেছে। তাই দেশের প্রবীন আইনজীবি ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ক্ষোভে দু:খে  মঙ্গলবার বলেই ফেলেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের জানাজা পাঠ হয়ে গেছে।

এমনকি প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন ঘটে যাওয়া ঘটনার তদন্ত দাবী করেছন। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি সুপ্রিমকোর্টে সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদে আগামী বৃহস্পতিবার অনশনের ঘোষণা দিয়েছে ।অনশন কর্মসূচি চলবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। অন্য দিকে সারা দেশের সাংবাদিকদের মিলনস্থল হল জাতীয় প্রেস ক্লাব। সেই প্রেস ক্লাবের গায়েও কলঙ্কের কালিমা লেপে দিয়েছে সাংবাদিক নামধারী রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা।

যারা জাতির বিবেক, জাতির ক্লান্তি লগ্নে যাদের দিক নির্দেশনার জন্য সাধারণ মানুষ তাকিয়ে থাকে, যারা সর্বসময় সত্যনিষ্ঠ্য খবরাখবর প্রকাশ করে থাকে আজ তারাই রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় নিজেদের মধ্যে সহিংসতা কিভাবে তৈরি করে।

তাহলে সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের কোন খবরের কথা আদ্যও বিশ্বাস করবে কি!নাকি তারা রাজনীতির পাতানো ফাঁদ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখবে। দেশের ১৬ কোটি মানুষ আজ দুই রাজনৈতিক দলের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাই সাধারণ মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যার ফলশ্রুতিতে দেশ আজ একটু একটু করে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

এরকম অবস্থা যদি চলতে থাকে দেশের অর্থনীতিসহ বিভিন্ন দিক বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। তাই সাধারণ মানুষের আরো সচেতন হতে হবে। এ অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজেনা বুধবার বিএনপি‘র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন ।

বৈঠক শেষে লিখিত  এক বিবৃতিতে মোজেনা বলেন, বিরোধী দলকে তার মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্ট, প্রেসক্লাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার সংঘটিত ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা জানান তিনি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, এগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী। কোনোভাবেই যেন এ ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা অনুরোধ করছি। একইভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ খোঁজা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন মোজেনা।

খালেদা-এরশাদ গৃহবন্দী না অবরুদ্ধ এ সর্ম্পকে সমাজ বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক পিয়াস করিম বলেন, আজকে  তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ না। অবরুদ্ধ বা গৃহবন্দী না হলে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া কেন বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না।

আপনার দেখেছেন মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসিতে কেন খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বের হতে বাধা দিলেন, কেন তার প্রটোকল বাতিল করা হল, এতে আমরা বুঝতে পেরেছি তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।

কিন্তু আমরা অবলোকন করলে বুঝতে পারি সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা মুখে এক কথা বলে আর বাস্তবে সেটা ভিন্ন। যে কারণে বিরোধী দলীয় নেতাকে গৃহবন্দী করেও দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছে না। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা।এটা নির্বাচন নয় নির্বাচনের নামে পরিহাস হচ্ছে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত ও প্রেসক্লাবের হামলার বিষয়ে বলেন, আ’লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা যখন লাঠি হাতে মিছিল করছিল তখন পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি যখন তারা হামলা চালিয়েছে তখনও ‍পুলিশের ভূমিকা একইরকম ছিল।  তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের প্রবীন শিক্ষককে পিটিয়েছেন ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী।এতে কি মনে হয় দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম বলেন, ডেফিনেটলি তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। তাকে গৃহবন্দী করে না রাখা হলে তার (খালেদা)বাসার সামনে আজ কেন হঠাৎ করে নিরাপত্তা জোরদার করা হল।কোন নেতাকর্মী তার সাথে দেখা করতে পারছে না কেন।

তিনি বলেন, একজন বিরোধী দলের নেতার যে প্রটোকল থাকে তা বিনা নোটিসে বাতিল করেছে সরকার। এতে কি মনে হয়না যে খালেদা জিয়া গৃহবন্দী। এরশাদ আগেই বলেছে যে তিনি নির্বাচনে যাবেন না। যখন সরকার কোন উপায়অন্ত পেলেন না তখন এরশাদকে নিয়ে সরকার চিকিৎসার নামে এমন নাটক করেছেন।