electionমান্না আতোয়ার, ঢাকা : আগামী ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি অবশেষে শেষ হয়েছে। এখন শুধু  ভোটগ্রহণ  বাকি। আগামী ৫ ই জানুয়ারী দেশের ৫৯টি জেলায় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট নেয়া হবে ।

৩৮৯ জন প্রার্থী ১৪৭টি আসনের জন্য লড়াই করছে। অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ জন। সেইসঙ্গে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের কার্যক্রম শেষ করতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আড়াইলাখ কর্মকর্তা।

সারাদেশে সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভোটকেন্দ্রগুলো ঘিরে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। নির্বাচন কমিশনের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এ বিষয়টি জানা গেছে।

সূত্রটি জানায়, কেউ যেন ভোটকেন্দ্রগুলো কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইসির পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আবার সংস্কার করা হয়েছে ভোটকেন্দ্রগুলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তার ইতিমধ্যেই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যালট পেপারসহ প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী। ভোটগ্রহণের আগের দিন ৪ জানুয়ারি এগুলো পাঠিয়ে দেয়া হবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে।

এবারের নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪১টি। প্রতিটি আসনের জন্য ১ হাজার করে পোস্টাল ব্যালট পেপারও ছাপানো হয়েছে। ৫৯টি জেলায় মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৮ হাজার ২০৯টি। ভোট কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে ৯১ হাজার ২১৩টি।

৫৯টি জেলায় ভোটগ্রহণের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে এদিন পোস্ট অফিস ও তার আগের দুই দিন খোলা রাখা হয়েছে সব তফসিলি ব্যাংক। নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে সারাদেশে মিছিল, সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ থাকবে। পরদিনই শনিবার রাত ১২টা থেকেই বন্ধ থাকবে সব ধরনের যান চলাচল। তবে প্রার্থী, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের গাড়ি নির্বাচন কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে চলতে পারবে বলে ইসি সূত্র জানায়।

এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সাড়ে চার লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা সক্রিয় থাকবে। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার/ভিডিপি, আনসার ব্যাটালিয়ান ও এপিবিএনের সদস্যরা। থাকবে গ্রাম্য পুলিশ, চোকিদার ও দফাদার। আর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও রাখবে কড়া নজরদারি।

কমিশন সূত্রে জানা যায়, আনসার ব্যাটালিয়ান গ্রাম্য পুলিশ, চোকিদার ও দফাদার থাকবে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫০৮ জন। ১ লাখ ৯ হাজার ২৫৪ পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রতি কেন্দ্রে থাকবে ছয় জন করে। আর ৫০ হাজার সেনাবাহিনী, ৬০ হাজার বিজিবি, ৩০ হাজার র‌্যাবের পাশাপাশি কোস্টগার্ড সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবে।

গত ১ জানুয়ারি থেকেই ভোটগ্রহণের দুইদিন পর ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী কাজে প্রস্তুত রাখা হয়েছে সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার। দেশের যেসব এলকায় ব্যালট পেপার ও বাক্স পাঠাতে সমস্যা হবে, সেখানে ব্যবহার করা হবে এসব আকাশযান। পাশাপাশি অসুস্থ ব্যক্তি, হতাহতদের জরুরি চিকিৎসা সেবায়ও এগুলো ব্যবহৃত হবে।

এদিকে ১ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করেছে বিশেষ মনিটরিং সেল। সারাদেশের সব কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত পরিস্থিতি দ্রুত নির্বাচন কমিশনকে জানানোর কাজ করবে এ সেল। পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি এলাকায় ভিজিল্যন্স ও অবজারবেশন টিমও কাজ করবে।

এবারের নির্বাচনে ১২টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১১৯, জাতীয় পার্টির ৬৩ জন নির্বাচনে লড়ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ১০৬ জন। আর বাকি ১০টি দল থেকে রয়েছেন ১০১ জন প্রার্থী। তবে এবারের নির্বাচনে বিদেশি কোনো পর্যবেক্ষক আসছে না। বাংলাদেশি পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের ২৯টি দল পর্যবেক্ষণ করবে। এছাড়াও আরো ১১টি দল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানা গেছে।