সারাদেশে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ২১
মান্না আতোয়ার ,আলমগীর ঢাকা: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আ’লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে নির্বাচন প্রতিহতের জন্য দফায় দফায় ১৮ দলীয় জোটের নির্বাচন প্রতিরোধ কমিটির সংঘর্ষে ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।বিভিন্ন জায়গায় ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা,ব্যালটপেপার ছিনতাই,ভোটদানে বিভিন্ন কেন্দ্রে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরনের মত ঘটনা ঘটে।
নির্বাচনী সহিংসতা যেসব জেলায় নিহতের ঘটনা ঘটেছে সেই জেলাগুলো রংপুর, নীলফামারী, ফেনী, মুন্সীগঞ্জ, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, নওগাঁ এবং ঠাকুরগাঁও।
এর মধ্যে দিনাজপুরে ৩, রংপুরে ২, নীলফামারীতে ২, ফেনীতে ২, লক্ষ্মীপুরে ১, নওগাঁয় ১, ঠাকুরগাঁও ৩, গাইবান্ধা ১, চট্টগ্রামে ১, যশোরে ২ এবং লালমনিরহাটে ১ জন মারা যান।
নিহতরা হলেন- রংপুরের জামায়াতকর্মী মিরাজুল ও শিবিরকর্মী হাবিবউজ্জামান হাবিব, নীলফামারীর শিবিরকর্মী জাহাঙ্গীর (৩৭), ফেনীর যুবদলকর্মী জামশেদ আলম ও শহিদুল্লাহ, মুন্সীগঞ্জের ছাত্রদল নেতা কনকন মিয়া (২৬), লালমনিরহাটের যুবদলকর্মী ফারুক হোসেন (৩৮), দিনাজপুরে বিএনপিকর্মী বাবুল হোসেন (৩৫), যুবদল নেতা চুন্নু (৩০), যুবজাগপার রায়হান মাসুদ (৩৫) ও আনসার সদস্য আব্দুল ওয়াহেদ (৩৬), লক্ষ্মীপুরে শিবিরকর্মী রুবেল হোসেন (২৬), চট্টগ্রামে শিবির কর্মী লালু ও নওগাঁর বাবুল হোসেন (৩৫)।
রংপুরে মিরাজুল ও হাবিবউজ্জামান নামে দুই জামায়াত কর্মী এবং দিনাজপুরে বাবুল হোসেন নামে বিএনপি কর্মী ও ডিমলায় জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক শিবির কর্মী নিহত হন।
এর মধ্যে রংপুরে দুই জামায়াত কর্মী, ঠাকুরগাঁওয় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, নীলফামারীতে শিবির কর্মী রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ভোটকেন্দ্রে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন নাশকতার খবর পাওয়া গেছে। যে ১৪৭টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে এর কোথাও উৎসবের কোনো আমেজ নেই। সবখানেই বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
আমাদের রংপুর প্রতিবেদক জানান, রংপুরের পীরগঞ্জে নিহত ২
জেলার পীরগাছায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছে। নিহত দুজনই জামায়াত-শিবিরের কর্মী। রোববার ভোররাতে পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের দেউতি গ্রামে এ সংঘর্ষ হয়।
পীরগাছা থানার ওসি মকবুল হোসেন জানান, ভোররাত ৩টার দিকে রংপুর-৪ আসনের (পীরগাছা-কাউনিয়া) ভোটকেন্দ্র দেউতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দখল নেয়ার চেষ্টা চালায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে দুজন নিহত হয়। নিহত মিরাজুল ইসলাম (৩৫) একই ইউনিয়নের আরাজিচালুনিয়া গ্রামের মৃত আজিজউদ্দিনের ছেলে। অন্য জনের পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
ঠাকুরগাঁওয়ে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে পিটিয়ে হত্যা
ভোটের ৯ ঘণ্টা আগে রাতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার জোবায়দুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাঁচ পুলিশ সদস্য।
শনিবার রাত রাত ১০ টার দিকে সদর উপজেলার ভেলাযান উচ্চ বিদ্যালয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় জোবয়দুর রহমানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ফয়সল মাহমুদ জানিয়েছেন, এই হত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন।
দিনাজপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত ১
শনিবার রাতে দিনাজপুর সদরের নশিপুর স্কুল কেন্দ্রে হামলার সময় পুলিশের গুলিতে বাবুল হোসেন নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বিএনপির পক্ষে দাবি করা হয়েছে গুলিতে নিহত বাবুল ১ নম্বর চেহেলগাজী ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটির নেতা। তবে পুলিশ এখনো এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেনি।
নির্বাচন বিরোধীদের আগুনে সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাসান মাহমুদের নির্বাচনী এলাকা দিনাজপুর ৪ -। ১২০টি কেন্দ্রের মধ্যে আগুনে ছাই হয়েছে ৫৭টি কেন্দ্র। সঙ্গে ব্যালট পেপার ভোট বাক্সসহ অন্যান্য নির্বাচনী উপকরণ। এছাড়াও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কেন্দ্রের ব্যালট পেপারসহ বিভিন্ন উপকরন।
নীলফামারীতে পুলিশের গুলিতে শিবিরকর্মী নিহত
নীলফামারীর ডিমলায় ভোটকেন্দ্রে আগুন লাগানোর সময় পুলিশের গুলিতে জাহাঙ্গীর নামে এক শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন। রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
মুন্সীগঞ্জ-২ নির্বাচনী আসনের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার একটি ভোটকেন্দ্রে ককটেল ছুড়তে গিয়ে পুলিশের ধাওয়ায় পুকুরে ডুবে ইউনিয়ন ছাত্রদলের এক নেতার মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দিনগত গভীর রাতে উপজেলার কাঠাদিয়া শিমুলিয়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
লালমনিরহাটে আহত যুবদল নেতার মৃত্যু
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংর্ঘষে আহত যুবদল নেতা ফারুক হোসেন শনিবার রাতে মারা গেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শনিবার সকালে পাটগ্রাম উপজেলার সফিরহাট এলাকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংর্ঘষে স্থানীয় যুবদল নেতা ফারুক হোসেন গুরুত্বর আহত হন।
তাকে আশংকাজনক অবস্থায় রংপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা এলাকায় সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের লোকজন ফারুককে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে নেয়।
পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন আবারও তার ওপর হামলা চালায়। প্রায় তিন ঘন্টা পর খবর পেয়ে হাতীবান্ধা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারুককে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠায়। রাতে চিৎকিসাধীন অবস্থায় ফারুকের মৃত্যু হয় বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
ফেনীতে পুলিশের গুলিতে দুই বিএনপি কর্মী নিহত
ভোটকেন্দ্র দখলের সময় জেলার সোনাগাজী উপজেলায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বিএনপির দুই কর্মী। অপর দিকে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। নিহত বিএনপি কর্মীর নাম জামশেদ ও শহিদুল্লাহ।
আমাদের লক্ষীপুর প্রতিবেক রাজীব হোসেন রাজু জানিয়েছেন,
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে পুলিশের গুলিতে এক শিবির কর্মী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, রামগঞ্জের চন্ডীপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করতে যায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
এতে বেলা প্রায় ১২টার দিকে পুলিশের সাথে সংষর্স বাধে জামায়াত-শিবির কর্মীদের। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি করলে মো. রুবেল নামের এক শিবির কর্মী গুলিবৃদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয়।
এব্যাপারে রামগঞ্জ থানার ওসির সাথে মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায় নি। এঘটনায় ঐ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।