আওয়ামী লীগের পাশেই থাকবে ভারত
নয়া দিল্লি: আওয়ামী লীগের পাশেই থাকবে ভারত। এই খবর দিয়েছে। এই নিয়ে বিবিসি একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন দিয়েছে অনলাইন সংস্করণে। প্রতিবেদনটি এখানে তুলে ধরা হলো: বাংলাদেশে আজকের নির্বাচনের দিকে সতর্ক নজর রাখলেও প্রতিবেশী ভারতের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে এই নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
ভারতের কূটনৈতিক মহল ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন – বিতর্কিত হলেও এই নির্বাচন যেকোনো মতেই অসাংবিধানিক নয়, ভারত সেটা স্বীকার করে এবং তাই এই নির্বাচনের প্রশ্নে তারা ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকারের পাশেই আছে। নির্বাচনের পরও ভারত যে শেখ হাসিনাকে সমর্থন জানাতে দ্বিধা করবে না – সেই ইঙ্গিতও মিলছে এখন থেকেই।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দিল্লির সাউথ ব্লক কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি ঠিকই, কিন্তু এই নির্বাচনকে ঘিরে হাজার বিতর্ক সত্ত্বেও ভারত কিন্তু মনে করছে এর মধ্যে অনৈতিক বা সংবিধানবহির্ভূত কিছু নেই, তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলাও অবান্তর।
ঢাকায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত দেব মুখার্জীর কথায়, বিএনপি না-লড়ায় এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু একে বেআইনি বলা যাবে না কিছুতেই। তিনি বিবিসিকে বলেন, পুরোপুরি সংবিধান মেনে এবং যে সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন করা প্রয়োজন সেই অনুযায়ীই এই নির্বাচন হচ্ছে, তাই এটা সম্পূর্ণ বৈধ।
তবে ভবিষ্যতে যদি কোনো একটা কাঠামো নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের মধ্যে সমঝোতা হয় – তাহলে আরও একবার সে দেশে নির্বাচন হতেই পারে বলে মি. মুখার্জির ধারণা।
মি মুখার্জীর কথা থেকে পরিষ্কার, অচিরেই বাংলাদেশে যে আর একটি নির্বাচন হতে পারে – সেই সম্ভাবনাটাও ভারত মাথায় রাখছে। তবে আজকের এই নির্বাচনটা এখনই করা ছাড়া যে কোনো উপায় ছিল না – সেই প্রশ্নে মি মুখার্জীর সঙ্গেই সম্পূর্ণ একমত ঢাকায় ভারতের আর এক সাবেক হাইকমিশনার বীনা সিক্রিও।
মিস সিক্রির কথায়, “মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে দুটো কারণে – তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথার বিলোপ এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধীদের সৃষ্ট সহিংসতার কারণে। এরকম নজিরবিহীন সহিংসতা বাংলাদেশকে কখনো কোনো সরকারকে সামলাতে হয়নি।”
তিনি আরো বলছেন, “তার পরও এই নির্বাচন তাদের করতেই হতো, কারণ তা না-হলে সাংবিধানিক সঙ্কট ও শূন্যতা তৈরি হতো! ফলে নির্বাচনটা যে এখন হচ্ছে, সেটা কোনো সমস্যা নয় – বরং তাতে ভালোই হয়েছে।”
পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষক ও মেইনস্ট্রিম সাময়িকীর সম্পাদক সুমিত চক্রবর্তী আবার বলছেন – এই নির্বাচন নিয়ে ভারতের প্রধান দুশ্চিন্তা হলো এরপর বাংলাদেশে জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামপন্থী শক্তির আরো বাড়বাড়ন্ত হতে পারে। তার কথায়, “ভারতের আশা ছিল, শেষ পর্যন্ত সব বিভেদ ভুলে বিএনপি ভোটে আসবে – কিন্তু সেটা হয়নি। ভোটটা এখন শান্তিপূর্ণ হোক, সেটাই ভারত চাইছে।”
মি. চক্রবর্তী সেই সঙ্গেই যোগ করছেন, সরকারিভাবে এটাই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান – কিন্তু বেসরকারিভাবে যেটা দিল্লি বলছে না সেটা হলো জামায়াত বা হেফাজতে ইসলামের মতো শক্তিগুলোর উত্থান নিয়ে তারা ভীষণ উদ্বিগ্ন – এবং এই শক্তিগুলোই এবারের নির্বাচনকে অন্য একটা মাত্রা দিয়েছে বলে দিল্লির ধারণা।
আর এই সব নানা কারণেই নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতিতেও ভারত শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর জন্য মনস্থির করে ফেলেছে বলে ইঙ্গিত মিলছে। দেব মুখার্জীর যুক্তি – এতে অনৈতিক কিছু নেই, ’৯৬ সালে বিতর্কিত নির্বাচনের সময় আমেরিকাও বিএনপি-র পাশেই ছিল। তিনি বলছিলেন, “আমি সে সময় ঢাকায় ছিলাম – ৯৬ সালে বিএনপি সরকার যে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করেছিল, আমেরিকাও তখন বলেছিল সেই নির্বাচন সম্পূর্ণ বৈধ ও গ্রহণযোগ্য!”
আসলে আমেরিকা বিএনপি-র পুরনো মিত্র, জামায়াতের প্রশ্নেও তারা ইদানীং কিছু নমনীয়তা দেখিয়েছে – কিন্তু সেই অবস্থানের সঙ্গে ভারতের একমত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলেই দেব মুখার্জীর যুক্তি।
বরং তিনি বলছেন, “আমি আশা করব ভারত এই পরিস্থিতিতে তাদের পরীক্ষিত মিত্র বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পাশেই দাঁড়াবে।” দিল্লিতে বাংলাদেশ স্টাডি সেন্টারের প্রধান বীনা সিক্রি আবার বলছেন -সরাসরি শেখ হাসিনার প্রতি নয়, ভারতের সমর্থন আসলে থাকবে সে দেশের গণতন্ত্রের প্রতি।
মিস সিক্রির কথায়, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি, ধর্মনিরপেক্ষতা যাতে থাকে – সেটা ভারতের জন্য খুব জরুরি। বাংলাদেশের মানুষও এর প্রতি বারে বারে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন।”
সেই সঙ্গেই তার প্রশ্ন, “কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল – নির্বাচনের বিরোধিতা করে, রাজপথে সহিংসতার মাধ্যমে সেই গণতন্ত্রের যাত্রাকেই থামানোর চেষ্টা চলছে। রাস্তার হিংসা কি একটা দেশের সংবিধান বদলাতে পারবে?”
মিস সিক্রির এই কথা থেকেই স্পষ্ট – গত কয়েক মাসের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে ভারত এখন স্থির করে ফেলেছে, এখন তাদের সমর্থন থাকবে বাংলাদেশের সাংবিধানিক নির্দেশনার দিকেই – যেটা এই পরিস্থিতিতে প্রকারান্তরে শেখ হাসিনাকে সমর্থনেরই সামিল! সূত্র: বিবিসি।