স্বতন্ত্র পরিচালক চূড়ান্ত হচ্ছে চলতি মাসে
ঢাকা: স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণে অনুমোদিত বিন্যস্তকরণ (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) স্কিম অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচন চূড়ান্ত হবে চলতি জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে।
এরপর সেটা শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিন্যস্তকরণ স্কিম অনুযায়ী আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগেই স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে থেকে চারজন পরিচালক নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
এ নির্বাচনের আগেই পরিচালনা পর্ষদে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে চূড়ান্ত হবে। একই সঙ্গে ওই সময়ের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ দুটির বার্ষিক সাধারণ সভাও অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, অনুমোদিত বিন্যস্তকরণ স্কিম অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জ ১৪ জন স্বতন্ত্র পরিচালকের একটি তালিকা বিএসইসিতে পাঠাবে। কমিশন সেখান থেকে সাতজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচন করবে। স্কিমে উল্লিখিত শর্তানুযায়ী স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচন করতে হবে। আবার স্বতন্ত্র পরিচালকদের মেয়াদ হবে কমপক্ষে তিন বছর। স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে থেকে একজন স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বপন কুমার বালা বলেন, স্কিম অনুযায়ী স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচিত করতে এরই মধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নির্ধারিতসংখ্যক পরিচালক নির্বাচিত করে বোর্ডে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। পরবর্তী সময়ে বোর্ডের অনুমোদনসাপেক্ষে স্বতন্ত্র পরিচালকের তালিকা কমিশনে দেয়া হবে।
স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচন প্রসঙ্গে সিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সাজিদ হোসেন বলেন, ১৫ জানুয়ারি সিএসই বোর্ডসভার দিন ধার্য রয়েছে। আশা করছি, ওই বোর্ডসভায় স্বতন্ত্র পরিচালকদের তালিকা অনুমোদন হবে। এর পরই তা কমিশনে পাঠানো হবে।
তিনি আরো বলেন, স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচনের জন্য কোনো কমিটি হয়নি। তবে বোর্ডের সদস্যদের স্কিমে দেয়া যোগ্যতা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে ১৪ জন স্বতন্ত্র পরিচালকের একটি তালিকা কমিশনে পাঠানো হবে। ওই তালিকা থেকে কমিশন সাতজন চূড়ান্ত করবে। গত ২৯ জুলাই মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণে বিন্যস্তকরণ স্কিম জমা দেয় দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিন্যস্তকরণ স্কিম অনুমোদন দেয় কমিশন।
অনুমোদিত বিন্যস্তকরণ স্কিম অনুসারে স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ হবে ১৩ সদস্যের। স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য স্বতন্ত্র পরিচালক হবেন। পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক সাতজন ও স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারসহ (কৌশলগত বিনিয়োগকারী) শেয়ারহোল্ডার পাঁচজন থাকবেন। তবে যত দিন পর্যন্ত স্ট্র্যাটেজিক শেয়ারহোল্ডার নির্বাচিত না হবে ততদিন পর্যন্ত এ পদ শূন্য থাকবে।
উল্লেখ্য, স্কিম অনুযায়ী, বিন্যস্তকরণের তারিখ থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদের (নির্বাচিত) প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ হিসাবে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভা ওই সময়ের আগেই অনুষ্ঠিত হতে হবে। বিন্যস্তকরণ-পরবর্তী পর্ষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান পর্ষদ আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও গ্রহণ করছে।
তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নেয়া হয়েছে। আগামী সোমবার ডিএসইর পর্ষদ সভায় নির্বাচনের চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণের সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পর্ষদ নির্বাচন ১৫ ফেব্রুয়ারি সম্পন্ন হওয়ার দিন ধার্য রয়েছে। এছাড়া সিএসইর পূর্ববর্তী বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। বিন্যস্তকরণ-পরবর্তী নির্বাচনের পর একসঙ্গে দুটি এজিএম করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে বর্তমান পর্ষদের। এক্ষেত্রে নির্বাচন ও এজিএম একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
যদিও বিন্যস্তকৃত এক্সচেঞ্জের প্রথম পরিচালনা পর্ষদ গঠন-সংক্রান্ত জটিলতা চলাকালে গত ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান পর্ষদ। তাদের এ ইচ্ছার কথা ওই সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানানো হয়েছিল। তবে বিন্যস্তকৃত এক্সচেঞ্জের প্রথম পরিচালনা পর্ষদ বা অন্তর্র্বতী পর্ষদ বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে গত ২২ অক্টোবর
সময় চলে যায়। পরে গত নভেম্বরে গ্যারান্টি দ্বারা সীমাবদ্ধ পাবলিক কোম্পানি হতে শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরের জন্য যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতর থেকে পুনঃনিবন্ধন সনদ পায় স্টক এক্সচেঞ্জ। এ সনদ পাওয়ার পরই স্টক এক্সচেঞ্জ বিন্যস্তকৃত বলে গণ্য হয়।