লাঙ্গল আছে এরশাদ নাই, হরতাল আছে বিএনপি নাই!
মান্না আতোয়ার, ঢাকা: রাজনীতির ময়দানের নাটকীয়তা যেন শেষ হচ্ছে না। বর্তমান রাজনীতিতে একের পর এক নাটকীয়তা চলছে। তবে এনাটকের অবসান কোথায় এ প্রশ্নের উত্তর খোদ সাধারন মানুষের। লাঙ্গল আছে এরশাদ নাই, হরতাল আছে বিএনপি নাই। এভাবে চলছে রাজনীতির অবস্থান। বিএনপি হরতাল দিয়ে মাঠ থেকে লাপাত্তা হয়ে গেছে। অন্যদিকে হরতাল অবরোধে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারন মানুষ।
এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল অস্থিরতা। নানা ধরনের সহিংসতার মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে আ’লীগের অধীনে রোববারে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এই দশম জাতীয় সংসদকে ঘিরে নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো। তেমনি এই নাটকের হিরো ছিলে খোদ এরশাদ নিজেই।
এরই মধ্যে জাতীয় পার্টি একবার বলে নির্বাচনে যাবে আরেকবার বলে নির্বাচনে যাবে না। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাপা আ’লীগের সাথে আঁতাত করলে জাপা’র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর এর প্রতিবাদ জানালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ তাকে দল থেকে বহিস্কার করে। এরশাদের কাজী জাফরকে বহিস্কার ছিল শুধুই নাটক।
কাজী জাফরকে বহিস্কার করলে জাপা‘র চেয়ারম্যানকে পাল্টা বহিস্কার করেন। চলতে থাকে তখন রাজনৈকিক অঙ্গনে নাটকের পর নাটক। এরই এক পর্যায়ে সব নাটকের অবসান ঘটিয়ে জাপা’র চেয়ারম্যান এরশাদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল ছাড়া অংশগ্রহণ করবেনা বলে ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে এই ঘোষণা দেয়ার পর পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে এরশাদের প্রয়োজনীয়তা মুহূর্তের মধ্যে গগন চুম্বীতে পরিণত হয়। কদর বাড়তে থাকে এরশাদের প্রধান দু’দলের কাছে এবং গণমাধ্যমেও এরশাদ তখন হিরো।
আ’লীগের এরশাদকে নির্বাচনে আনার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে তিনি সিদ্ধান্তে অটল থাকলে আ’লীগ কোন উপায় না পেয়ে সর্বশেষে চিকিৎসার নামে এরশাদকে সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তখন এরশাদ বিহীন জাতীয় পার্টিকে রওশন এরশাদ নির্বাচনের জন্য নেতৃত্ব দেয়। চিকিৎসার নামে এরশাদ আটক হলে তিনি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলেন আমার দল নির্বাচন বয়কট করেছে। লাঙ্গল জাতীয় পার্টির প্রতীক। তাই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নামে কোন প্রার্থীকে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ করবেন না।
নির্বাচন কমিশন তার কথা না মেনে রওশনের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিকে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দেয়। মূলত এ কারণে দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী এলাকা জুড়ে সাধারণ মানুষ বলেছে, রওশন আছে এরশাদ নাই, লাঙ্গল আছে এরশাদ নাই।
অন্যদিকে নির্বাচনের পর এখন সবার মুখে একটাই প্রশ্ন কে হচ্ছেন বিরোধী দলীয় নেতা। তবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘এখন থেকে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।’
আমরা যারা জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি, তারা রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা করে সংসদে নিয়ে যাব। দু’একদিনের মধ্যে রওশন এরশাদ সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন।’
এদিকে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট দশম জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নানা ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তাদের এই আন্দোলনকে কোনভাবেই সফল করতে ১৮ দলীয় জোট ব্যর্থতার পরিচয় দেয়।
প্রথমের দিকে আন্দোলনকে সফলতায় রুপ দেখাতে পারলেও তার ধারবাহিকতা বিএনপি ও তার শরীক দলগুলো ধরে রাখতে পারেনি। ১৮ দলীয় জোট ২০১৩ সালের পুরো বছরজুড়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত রাখার চেষ্টা করে গেলেও তা ব্যর্থ হয়েছে।
কারণ ১৮ দলের পক্ষ থেকে বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষনা দিলে দলের দু’একজন নেতা ও জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মী ছাড়া ঢাকার রাজপথে কেন্দ্রীয় কোন নেতাদের দেখা যায়নি।
ঢাকার তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ কেন্দ্রীয় ও ঢাকার শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আ’লীগের সাথে আতাত করার কারণে সারা দেশে আন্দোলন তীব্রতর হলেও ঢাকার রাজপথ কাঁপাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আবার কোন কোন নেতা আঁতাত করতে না পারার কারণে লোক চক্ষুর আড়ালে চলে গেছে। তার মানে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদেরকে আত্মগোপনকারী হিসেবে ইতিমধ্যে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
পরিশেষে ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন ঠেকাতে ১ জানুয়ারী থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ১৮ দলের পক্ষ থেকে আহ্ববান করা হয়। কিন্তু এতে আন্দোলনের সেই অতীত চিত্র আবার ফুটে উঠেছে। ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা ঢাকার রাজপথে নেই।
সারা দেশে তাদের তৎপরতা থাকলেও রাজধানীতে কোন তৎপরতা নেই। কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা লাপাত্তা হয়ে গেছে। তাই সারা দেশের সাধারণ মানুষ তথা নগরবাসী বলে যেমন লাঙ্গল আছে এরশাদ নাই তেমনি অবরোধ হরতাল আছে বিএনপি’র কোন নেতাকর্মী নাই।