সংখ্যালঘুআমিনুল ইসলাম, ঢাকা: দেশে নির্বাচনী ট্রামকার্ডে এখন সংখ্যালঘুরা পরিনত হয়েছে। প্রত্যেক নির্বাচনের আগেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মহড়া শুরু হয়। এ যেন নির্বাচনি এক উৎসব মহড়া। তেমনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী জামায়াত শিবিরের সহিংসতা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

এ সহিংসতার শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘু সহ সাধারন মানুষ। এ সহিংসতা বিগত ২০০১ সালের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। দেশজুড়ে এখন সাধারন মানুষের মধ্যে আতঙ্কে নাম জামায়াত শিবির।

দশম নির্বাচন শুরুর আগ থেকেই খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যে তান্ডব চালিয়েছে তাতে মনে হয় দেশে অরাজকতা চলছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও ঐ সব এলাকায় নিরুপায় হয়ে নিজেদের রক্ষার্থে নিরব ভুমিকা পালন করছে।

বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নিয়মিত চালানো হচ্ছে হামলা, নির্যাতন, লুটপাট ও তাদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বীয় স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে নির্বাচনের সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করে। তারা মনে করে সংখ্যালঘুরা কোনো বিশেষ দলীয় গোত্রের ভোটার। তাই তাদের ভোটদান থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়।

সম্প্রতি নির্বাচনকে ঘিরে যশোর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, সাতক্ষীরার হিন্দু সম্প্রদায়ে ব্যাপকভাবে সহিংসতা চালানো হয়েছে। হামলার শিকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অনেকে প্রাণনাশের ভয়ে আশ্রয় নিয়েছে মন্দিরে। কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে পাড়ি জমিয়েছে। হামলা ও নাশকতা শেষ হবার পরেও কেউই নিজ নিজ ভিটা বাড়িতে ফিরতে পারছে না।

২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্নভাবে হামলা ও সহিংসতা চালানো হয়েছে। বিশেষ করে প্রত্যেক নির্বাচনের আগেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মহড়া শুরু হয়। কিন্তু এর বেশিরভাগেরই কোনো বিচার হয়নি।

তাই দিনে দিনে বেড়েই চলেছে এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা। ফলে নিয়মিতভাবে কমছে এদেশের সংখ্যালঘুদের সংখ্যা। এ দেশকে বসবাসের জন্য নিরাপদ না ভেবে প্রতিনিয়ত তারা দেশ ছেড়ে নিজ গোত্রীয় দেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ জরিপে দেখা গেছে, ৬২ বছর আগে ১৯৫১ সালে এ দেশে মোট জনসংখ্যার ২৩ দশমিক ১ শতাংশ ছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তখন দেশ ছিল পরাধীন। ৬২ বছরে স্বাধীন দেশে

এই সংখ্যা নেমে এসেছে ৯ শতাংশের নিচে। কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। শুধু নির্বাচনের আগেই নয়, নির্বাচনের পরেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি যশোরের অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়েছে। এসময় প্রায় ২০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকর্মীরা।

অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি তারা বাড়িঘরে ভাঙচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর গত রোববার সন্ধ্যায় এই নির্মম নির্যাতন ও হামলা চালানো হয়েছে। এই ঘটনায় বেশকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় মালোপাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ভোটগ্রহণের দিন ভোট দিতে গেলে আমাদের ভোট না দেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের হুমকি উপেক্ষা করে ভোট দেওয়ায় হামলা চালানো হয়েছে।

মালোপাড়ার বাসিন্দারা জানান, গত রোববার সন্ধ্যায় প্রায় দুই শতাধিক লোক চাঁপাতলা মালোপাড়ায় অতর্কিত হামলা চালায় এবং ১৫টির মত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এমতাবস্থায় আতঙ্কিত লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে অনেকে নদীর ওপারে পাশের গ্রামে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এ সময় হামলাকারীরা ১২০/১৩০টি বাড়ি ও একটি দোকান লুট ও ভাঙচুর করে। এ বিষয়ে অভয়নগর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন প্রতিহত চেষ্টাকারীরাই এ হামলা চালিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বীয় স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে নির্বাচনের সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করে। তারা মনে করে সংখ্যালঘুরা কোনো বিশেষ দলীয় গোত্রের ভোটার। তাই তাদের ভোটদান থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে।

এ সময় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে স্থানীয় কিছু সুযোগ সন্ধানী লোক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িগুলো ভাঙচুর করে এবং তাদের সম্পদ লুটপাট করে। ২০০১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের ওপর সংগঠিত বেশিরভাগ হামলারই কোনো বিচার হয়নি। তাই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়মিতভাবে অব্যাহত রয়েছে। অথচ এ অপরাজনীতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তথা হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভোট মানেই একটা বিশেষ জনগোষ্ঠীর ভোট। এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনের সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী সহিংসতার শিকার হন। এখানে হিন্দু, মুসলমান ও বৌদ্ধ বলে কিছু নেই, সবাই দেশের নাগরিক।