বিএনপির অর্ন্তদ্বন্দ্বের রিপোর্ট আনন্দ বাজারে
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: জয়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচন থেকে কেন সরে এলেন বিএনপি-নেত্রী খালেদা জিয়া আপাতত এই প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে উত্তাল দলটির ঘরোয়া মহল। নেতাদের মধ্যে এই নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। আর বিএনপির এই ঘরোয়া কোন্দল নিয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এক বিশেষ রিপোর্ট এসেছে বলে দাবি করেছে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা।
শুক্রবার পত্রিকাটিতে প্রকাশিত ‘নির্বাচন বর্জন কেন, খালেদার জবাব চাইছেন কর্মীরা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একটি বড় অংশের ক্ষোভ ক্রমশ চড়ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট এসেছে বাংলাদেশ থেকে। ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির পর, আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে সব কর্মী -সমর্থক, তারা প্রকাশ্যেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। কৈফিয়ৎ চাওয়া হচ্ছে নেতৃত্বের কাছে।
দেশটির সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, বিএনপির ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই হতাশ নয়াদিল্লি। গত দুবছরে মনমোহন সরকারের একাধিক শীর্ষ নেতা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু তার কোনও ইতিবাচক ফল ফলেনি। ২০১১ সালে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি প্রথম আলোচনা শুরু করেছিলেন খালেদার সঙ্গে।
২০১২ সালে বেগম জিয়া ভারত সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তার সম্মানে বিশেষ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। এরপর দেশটির দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ এবং সালমান খুরশিদ বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন । মনমোহন সিংকে সে সময় খালেদা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, তিনি খোলা মনে ভারতে এসেছেন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলতে। তিনি চান ‘অতীতের ক্ষত ও তিক্ততা’ ভুলে যাক দিল্লি।
কিন্তু এরপর খালেদা পর পর যে সব পদক্ষেপ করেন, তাতে ‘অতীতের ক্ষত’ খুঁচিয়ে উঠে নতুন করে তিক্ততা তৈরি হয়। দিল্লি তাকে বলেছিল, তিনি মৌলবাদী জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করলে ভারত খুশি হবে। কিন্তু কার্যত জামায়াতকে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরেন খালেদা। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী মার্চে বাংলাদেশ সফরে গেলে খালেদা জিয়া তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎটুকুও করেননি ঢাকায় হরতালের অজুহাত দিয়ে। সেই হরতাল ডেকেছিল বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীই!
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে ভারত বারবার তাকে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুরোধ করেছে। কিন্তু বিএনপি নেত্রী তা কানে তোলেননি। যে রিপোর্টটি সম্প্রতি সাউথ ব্লকের কাছে এসেছে, তাতে বলা হচ্ছে, দীর্ঘ সাত বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতা -কর্মীরা পৌরসভা নির্বাচনগুলিতে জিতে ক্ষমতায় ফেরার আশায় বুক বাঁধছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া নির্বাচন বয়কটে অনড় হয়ে রইলেন।
রিপোর্ট বলা হচ্ছে, ‘বিএনপির অসংখ্য কর্মীর মনে যে প্রশ্নটি তৈরি হয়েছে, তার সদুত্তর খালেদা এখনও দিতে পারেননি। প্রশ্নটি হলো, জয়ের সমূহ সম্ভাবনাময় একটি নির্বাচন শুধুমাত্র অরাজনৈতিক অন্তর্র্বতী সরকারের দাবি তুলে কেন ছেড়ে দিলেন খালেদা? যে আশঙ্কার কথা বিএনপি নেত্রী বারবার প্রকাশ করেছেন, তা হলো ভোট কারচুপি। কিন্তু পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে হওয়ার পরেও সেই আশঙ্কা থাকবে কেন? সেই নির্বাচনের শেষ পর্বে গাজীপুরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রবল চেষ্টা করেছিল জেতার।
কিন্তু তা সত্ত্বেও জিততে পারেননি তারা। এতেই প্রমাণ হয়, কারচুপি করেও এবার মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হয়তো অর্জন করতে পারতেন না হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ। দলের মধ্যে যে বিতর্কটি তৈরি হয়েছে তা হলো যদি নির্বাচনে বিএনপি যোগ দিত এবং আওয়ামী লীগ কারচুপি করে জিতত, তার রাজনৈতিক সুফল পেত কিন্তু বিএনপিই। কেন না হাসিনা সরকারে বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তো রয়েছেই, তার ওপর যোগ হত কারচুপি-বিরোধী জনমত। খালেদা জিয়ার সরকার গড়ার নৈতিক দাবিও সে ক্ষেত্রে জোরদার হতো।
দ্বিতীয় বিতর্কটি হলো, যেখানে পৌরসভাতেই আওয়ামী লীগ কারচুপি করে জিততে পারছে না, সেখানে দেশজুড়ে ভোট কারচুপির বিষয়টি কী ভাবে করা সম্ভব হতো?
জামায়াতকে বাদ দিয়ে খালেদা ভোটে আসতে চাননি বলে যে তত্ত্বটি অনেকে দিচ্ছেন, সেটিও দলের মধ্যে কঠিন সমালোচনার মুখে পড়েছে। বলা হচ্ছে, ভোটে জিতে এসে জামায়াতকে মূল স্রোতে নিয়ে আসা এবং জামায়াতের যুদ্ধপরাধীদের শাস্তি লঘু করে দেয়ার কাজটিও চাইলে সারতে পারতেন খালেদা। কিন্তু সে সব কিছুই না করে তিনি কার্যত ওয়াকওভার দিয়ে গেলেন শেখ হাসিনাকে।