খালেদা জিয়ারস্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা:  বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, জামায়াতের সাথে কৌশলগত রাজনৈতিক জোট। তবে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগই প্রথম আঁতাত বা জোট করেছে। আমি বলবো, জামায়াতের সঙ্গে জোট বলেন, আর ঐক্য বলেন, আওয়ামী লীগই প্রথম করেছে।

৮৬ সালে চুক্তি হলো কেউ নির্বাচনে যাবো না। পরে রাতের বেলা আওয়ামী লীগ তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলো। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করলো। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার রাতে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, “দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।” সুতরাং একাদশ সংসদ নিয়ে আলোচনা পরের বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও বেগম খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের সঙ্গে জোট বা আঁতাতের বিষয়টি শুধুই কৌশলগত ব্যাপার বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

ভয়েস অব আমেরিকার ওয়াশিংটন স্টুডিও থেকে তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন সরকার কবির উদ্দীন। এ সাক্ষাৎকারে বিএনপির দলীয় অবস্থান ও আঠারো দলের পরবর্তী ভাবনা তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।

নতুন কর্মসুচীর প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, “প্রথম কথা আমি বলব যে, দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। যেটা হয়েছে তা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের মানুষ সরকারকে সম্পূর্ণভাবে রিজেক্ট করেছে। আপনি নিজেই দেখেন যেখানে ১৫৩টা সিটে কেউ পার্টিসিপেট করেনি। কন্টেস্ট করেনি। কেউ আগ্রহীই নয় নির্বাচন করতে। সেখানে শুধু একদলীয় নির্বাচন ১৫৩টা সিটে হয়েছে। কোনো প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি।

দ্বিতীয়ত, যে ১৪৭টা সিটে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের কথা ছিল। সেখানেও দেশের ও বিদেশের মিডিয়া কর্মীরা দেখেছেন, ভোটিং সেন্টারে মানুষই নেই। প্রিজাইডিং অফিসার কোনো কোনো যায়গায় ঘুমাচ্ছেন। কোনো কোনো জায়গায় নিজেরাই ভোট দিচ্ছেন। ৪৭/৪৮টা ভোট কেন্দ্রে কোনো ভোটার ভোট দেয়নি। তারপরে অনেক কেন্দ্র বন্ধ।

তারপরও যেটা হলো তাতে ৫ শতাংশ ও হবে না। তো এতে কি হলো। মানুষের এটাই কি রায়? জনগণের মতামতের কোনো প্রতিফলন এখানে হয়নি। কাজেই এটাকে কোনো ইলেকশন আমি বলব না। এটা ভাগাভাগির নির্বাচন বলতে পারেন। তারা নিজেরা সিট ভাগাভাগি এবং ক্ষমতার ভাগাভাগি হয়েছে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ সত্যিকারের একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। যেখানে সকল দলের অংশগ্রহণ থাকবে। সেরকম একটি নির্বাচন দেখতে চায়। সেই নির্বাচনটা হতে হবে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। মানুষ এখন আরও পরিষ্কার ৫ জানুয়ারির পরে যে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।

এবং নির্বাচন কমিশন যে একটা মেরুদণ্ডহীন বা দলীয় সরকারের মতো কাজ করেছে, এটা একদম পরিষ্কার। যেখানে ৫ শতাংশও ভোট পড়েনি। সেখানে কেমন করে ৪০ শতাংশ ভোট বলে? এটা একটা নির্লজ্জ মিথ্যা কথা বলছে। এবং এজন্য তার দু’দিন সময় লেগেছে। সব ঠিকঠাক করে, গুছিয়ে কিভাবে বলবে তা ঠিক ঠাক করে। কাজেই এটা পরিষ্কার। এবং জাতি এটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ”

একাদশ সংসদ নিয়ে আলোচনার আহ্বান প্রশ্নে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দশম নির্বাচনই তো মানুষ রিজেক্ট করেছে। একাদশের কথা পরে হবে। আমরা গণিতান্ত্রিক দল। আমি অনেক আগে থেকেই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা সত্যিকারই গণতন্ত্র চাই। জনগণের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, মানবাধিকার রক্ষার জন্য চাই। শন্তি চাই, উন্নয়ন চাই, দারিদ্র বিমোচন চাই, লেখাপাড়া চাই। তরুণরা এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ”

জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ, জোট বা ঐক্য বা আঁতাত কৌশলগত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি প্রধান বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত বলেন, জোট বলেন বা ঐক্য বলেন তা আওয়ামী লীগই আগে করেছে। এরশাদের আমলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কেউ নির্বাচনে যাব না। তারপর মাঝ রাতে এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে গেল আওয়ামী লীগ।

জামায়াতের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে নিয়ে গেল। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিটা আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতের। সে জন্য তখন আওয়ামী লীগ অনেক নাশকতা করেছে। আওয়ামী লীগ এখনও জামায়াতের সঙ্গে সেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এই জোট সম্পূর্ণভাবে কৌশলগত।”

বিদেশীদের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা স্বাধীন দেশ। এদেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। বিদেশীরা আমাদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার হিসাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা বলতে পারেন। কিন্তু তারা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করলে মানুষ তা সহ্য করবে না।”

আর সাম্প্রতিক সময়ে অচলাবস্থা, হত্যা, নাশকতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “এ সবকিছুর দায় বর্তায় গভর্নমেন্টের উপর। তাদের একগুঁয়েমি, জেদের ওপর। এজন্য সরকার দায়ী। দলীয় লোকজনই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘর তারা পোড়াচ্ছে। অতীতেও তারা হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে। সংখ্যালঘুদের সবসময় তারা খারাপ আরচণ করছে।” তিনি বলেন, “পুলিশের চোখের সামনে এগুলো ঘটলেও তারা কিছু বলছে না। কারণ তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে।”

আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়ে তিনি বলেন, “গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার, মানবাধিকার, স্বাধীন দেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে কারও হস্তক্ষেপ নয় এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

বিএনপি চেয়াপারসন অভিযোগ করেন, “দেশের পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত খারাপ। অত্যন্ত ভয়াবহ। সারাজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য হত্যা, গুম করছে আওয়ামী লীগ। যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধেই নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’