বিচারপতি হাবিবুর রহমান আর নেই
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান আর নেই। শনিবার রাতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
উইকিপিডিয়া জানায়, ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমার দয়ারামপুর গ্রামে মুহম্মদ হাবিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন৷ বাবা মৌলভী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন আইনজীবী৷ জহিরউদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী।
তিনি প্রথমে আঞ্জুমান এবং পরে মুসলিম লীগ আন্দোলনের সাংগঠনিক পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন৷ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় হাবিবুর রহমানের পিতা জাতীয় যুদ্ধ ফ্রন্টের বিভাগীয় নেতা ছিলেন৷
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে গ্রেপ্তার করে বহরমপুর কারাগারে পাঠায়, অবশ্য কয়েকদিন পরই জহিরউদ্দিন বিশ্বাস মুক্তি লাভ করেন। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে মুশির্দাবাদ ছেড়ে জহিরউদ্দিন বিশ্বাস রাজশাহীতে চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন৷ হাবিবুর রহমানের মা গুল হাবিবা ছিলেন গৃহিণী৷
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে ১৯৪৯ সালে বিএ সম্মান ও ১৯৫১ সালে এমএ পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে ১৯৫৮ সালে বিএ সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
হাবিবুর রহমান তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেখানে তিনি ইতিহাসের রিডার (১৯৬২-৬৪) ও আইন বিভাগের ডিন (১৯৬১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৬৪ সালে তিনি আইন ব্যবসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগ দেন।
তিনি সহকারী অ্যাডভোকেট জেনারেল (১৯৬৯), হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট (১৯৭২) ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলেরও (১৯৭২) সদস্য ছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ লাভ করেন।
তিনি ১৯৯৫ পর্যন্ত আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।। ১৯৯০-৯১ মেয়াদে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে হাবিবুর রহমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
১৯৯৫ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হিসেবে তিনি ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তথা দেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।