Hasina_pবিশেষ প্রতিবেদক: আ’লীগ সভানেত্রী ও তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কোন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। যে কারণে তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুটনৈতিক চাপ ও আন্দোলন ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজের হাতেই রেখে দিয়েছেন।

কারণ ক্ষতিয়ে দেখলে বুঝা যায়, যে হাসিনা এমন কাউকে এই দুই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিবেন যিনি তার নিজ বিচক্ষণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে নিজেই সামাল দিতে পারেন।  কারণ বিগত দিনের এই দুই মন্ত্রনালয়ের যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা বিভিন্ন সময়ে মিডিয়ার সামনে বিভ্রান্তিমূলক বক্তৃতা দেয়ার কারণে সরকারকে সমালোচনার মূখে পড়তে হয়েছিল।

দক্ষ কাউকে দিতে না পারলে সমস্যা হবে এমন মনে করেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলেও এই নির্বাচন নিয়ে এখনও সচেষ্ট নন আন্তর্জাতিক মহল। তারা এখনও চাইছেন বর্তমান সরকার যত দ্রুত সম্ভব বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতা করবে। কম সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচন দিবে।

রোববার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েও একই সুরে কথা বলেছেন। এর আগের দিন মার্কিন সিনেট থেকেও দুই নেত্রীকে চিঠি দেয়া হয়েছে সমঝোতার জন্য।

এদিকে অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো বিএনপির সঙ্গে সরকারকে সমঝোতা করার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘও একই অবস্থানে রয়েছে। এজন্য রোববার কুটনীতিক শিষ্টাচার রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা বঙ্গভবনে মন্ত্রী পরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেননি।

সূত্র জানায়, কুটনীতিক শিষ্টাচার হচ্ছে যখন যে কুটনীতিক যে দেশে থাকবেন সেখানে রাষ্ট্রীয় যেসব অনুষ্ঠানে তাদেরকে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানোনো হয় তখন তারা সেখানে যোগ দিতে অনেকটাই বাধ্যবাধকতার মধ্যেই চলে আসেন। আর এই কারণেই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাবেন কি, যাবেন না এমন দোটানা ছিল কুটনীতিকদের মধ্যে।

আর এরই অংশ হিসাবে রোববার সকালে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি উইলিয়াম হানার বাসায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তারা যোগ দিয়ে শপথ গ্রহণে যাবেন কি যাবেন না সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। ওই বৈঠকে যুক্তরাজ্য, জার্মান, ফ্রান্স, ইতালী, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা অংশ নেন।

এদিকে বিকেলে বেশিরভাগ প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এরমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা, যুক্তরাষ্ট্রের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, অষ্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইল কক, জাতিসংঘের আবসিক প্রতিনিধি নেইল ওয়াকার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উইিলয়াম হানা, কুটনৈতিক কোরের ডীন শাহেব মোহাম্মদসহ বেশ কয়েকজন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তারা সেখানেও যোগ দিলেও সরকারকে অভিনন্দন জানাননি।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত নতুন নির্বাচন করার জন্য বলেছেন। বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের এই কথা বলেন তিনি। অন্য দিকে তারা যখন সবাই একদিকে তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে সরকার গঠন করায় ও দায়িত্ব নেয়ার জন্য তাকে অভিনন্দন জানান।

এদিকে ভারত ছাড়াও এখনও পর্যন্ত বড় কোন আন্তর্জাতিক শক্তি এখনই সরকারকে অভিনন্দন জানাতে চাইছে না। তারা আরো সময় অপেক্ষা করতে চাইছে। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নিবে। সূত্র জানায়, তারা চাইছে বাংলাদেশে চলমান সংকটের নিরসন, সহিংসতা বন্ধ করে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতা করে নতুন নির্বাচন। যদিও এই সব আন্তর্জাতিক শক্তির কোন চাপই এই সরকার গ্রাহ্য করছে না। সরকার তাদের মতো করে সব কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে সরকারের উপর কুটনৈতিক চাপ আরো বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে সরকারকে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করতে পারে। জাতিসংঘ এই ক্ষেত্রে মূল ভূমিকায় থাকতে পারে। তারা নির্বাচন করার জন্য বাংলাদেশের উপর অবরোধ আরোপ করতে পারে। এছাড়াও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করার জন্য প্রশাসকও নিয়োগ করতে পারে।

সেই ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়ার চেষ্টা করবে। জাতিসংঘ এই ব্যাপারে সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও তারা বাংলাদেশে সাহায্যের পরিমাণও কমিয়ে আনতে পারে। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পোশাক শিল্পের জন্য নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এই অবস্থানগুলো হতে পারে এমন একটি পরিকল্পনা চলছে। আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতা বাড়ছে। এটা শেখ হাসিনার কান পর্যন্তও পৌঁছেছে। এটা জেনই শেখ হাসিনা যত দ্রত সম্ভব নির্বাচনকালীন সরকার থেকে নির্বাচিত সরকারে ফিরে যেতে চেয়েছেন।

এই জন্য একদিনের নোটিশে সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এর তিনদিনের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে তাদেরও শপথ নেয়ানোর ব্যবস্থা নিয়েছেন। নির্বাচিত সরকারে ফিরেও গেছেন। তা গেলেও তার উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা এখনও কাটেনি। এই কারণে তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে পথ চলছেন।

এই মুহুর্তে এই কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রণালয় তিনি কারো হাত ছাড়া করেননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রেখেছেন। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার মতো এমন কোন নেতা এখনও পাননি। কোন নেতা এই সংকটকালে সেখানে দক্ষতা দেখাতে পারবেন বলে মনে করছেন না। কারণ কোন কারণে এখন তার কুটনৈতিক ব্যর্থতা হলে সরকারের ভবিষ্যৎ সমস্যা হয়ে যাবে।

যাতে করে তা না হয় এই জন্য কুটনৈতিক চাপ মোকাবিলা করতে নিজের হাতেই সেটা রাখলেন। যাতে করে কেউ চাপ দিলে ও যোগাযোগ করলে তিনি নিজেই তা মোকাবিলা করতে পারেন। দিপু পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুটনৈতিকভাবে ব্যর্থ হওয়ায় ও আলী হাসান মাহমুদ আলীও কুটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ও চাপ মোকাবিলা করতে কোন সাফল্য দেখাতে পারেননি।

এই কারণে তাদের উপর ভরসা করছেন না। এদিকে তিনি এটাও মনে করছেন আন্তর্জাতিক মহল বিএনপি জামায়াতকে দিয়েও চাপ দিতে পারে। দেশে তারা আরো আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারেন। সেটা যাতে না পারেন বিএনপির আন্দোলন দমন করতে ও আন্দোলন করা সব নেতাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিতেও কুণ্ঠাবোধ করবেন না।

এই জন্য তিনি মনে করছেন এই ক্রান্তিকালে তিনি যদি দক্ষ হাতে বিএনপিকে ও তাদের আন্দোলনকে দমন করতে না পারলে সমস্যা হয়ে যাবে। এই কারণে তিনি কোন ঝুঁকি নিতে চাননি। তাই তিনি স্বরাষ্ট্র নিজের হাতে রেখেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন আসাদুজ্জামান কামালকে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবেন।

সূত্র জানায়, যতক্ষন পর্যন্ত শেখ হাসিনা এই দুটি বিষয়ে চাপ মুক্ত না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত নতুন করে কাউকে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রর দায়িত্ব দিতে চাইছেন না। এদিকে এই প্রথমবারের মতো এতগুলোর দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মন্ত্রিপরিষদ, সশস্ত্র, প্রতিরক্ষা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও তিনি থাকবেন।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। সেখানে উল্লেখ করা হয়, যেসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত সেসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হাতেই থাকবে। কারণ সাহারা খাতুন ও মহিউদ্দিন খান আলমগীর এদের কারো উপরই তিনি স্বরাষ্ট্র দেয়ার মতো আস্থা পা্চ্ছেন না। আস্থাহীনতার কারণেই দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য মন্ত্রী খুঁজছেন।