বাংলার কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন আর নেই
রুহুল আমীন,ঢাকা: বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন মারা গেছেন।শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নিশ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় এই অভিনেত্রীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল।
গত ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ফুসফুসে পানি আসার কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে।
এর আগে ২০০৭ সালের অক্টোবর, ২০০৮ এর ফেব্রুয়ারি এবং ২০১০ সালের জুন মাসে চিকিৎসক মৈত্রের অধীনেই তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
অভিনয় থেকে অবসর নেয়ার পর থেকেই মিডিয়া থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন ৮২ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী।
১৯২৯ সালে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের পাবনার মেয়ে রমা দাশগুপ্ত পরে সুচিত্রা নাম নিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রীতে পরিণত হন। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো আজও বাঙালির হৃদয়ে অমলিম।
সুচিত্রা অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- শাপমোচন, সাগরিকা, পথে হলো দেরি, দ্বীপ জেলে যাই, সবার ওপরে, সাড়ে চুয়াত্তর, সাত পাকে বাঁধা, দত্তা, গৃহদাহ, রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত ইত্যাদি। হিন্দি চলচ্চিত্র আাঁধিতে তার অভিনয়ও প্রশংসনীয়।
শিল্পপতির ছেলে দীবানাথ সেনকে বিয়ে করেন সুচিত্রা, মুনমুন তাদের একমাত্র সন্তান।১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামে চিলচ্চিত্র দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রুপালী জগতের যাত্রা শুরু হয় সুচিত্রা সেনের। হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেও সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
‘দেবদাস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৫৫ সালে জাতীয় পুরষ্কারও অর্জন করেন তিনি। ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে এসে ‘আন্ধি’ ছবিতে রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে কেন্দ্রীয় চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয় জয় করে নেন সুচিত্রা।
‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৬৩ সালে ‘মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’ সেরা অভিনেত্রীর সম্মান পান তিনি। আর এই সম্মানের মধ্য দিয়ে প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরষ্কৃত হন সুচিত্রা সেন।
১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবিতে সর্বশেষ অভিনয় করেন সর্বকালের জনপ্রিয় এই নায়িকা। এরপর আকস্মিকভাবেই জীবনের ইতি টেনে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান তিনি। পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না।
২০০৫ সালে সুচিত্রাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলেও ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দিল্লি যেতে রাজি হননি তিনি। ফলে তাকে আর পুরস্কারটি দেয়া হয়নি।কলকাতায় তিনি যে বাড়িতে থাকেন, সেখানে মেয়ে ও দুই নাতনি রিয়া সেন ও রাইমা সেন ছাড়া মাত্র গুটিকয়েক পারিবারিক বন্ধুরই প্রবেশাধিকার রয়েছে।