খালেদা-জিয়ামান্না আতোয়ার, ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তার দলের পরবর্তী কর্মসূচির ব্যাপারে কি ধরনের ঘোষণা দেয় সে বিষয়ে প্রত্যেকের মধ্যে কৌতুলের কমতি ছিল না। তাই বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপি’র তৃর্ণমূল নেতাকর্মীসহ সর্বসাধারণের চোখ ছিল টিভি পর্দার দিকে।

সাংবাদিক সম্মেলন থেকে খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের কি দিক নির্দেশনা বক্তব্য দেন তা ছিল দেখার বিষয়। কিন্তু ৩০ মিনিটের বক্তব্যের মধ্যে হরতাল বা অবরোধের মতো কোন কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা না থাকায় সবার মাঝে যেন ফিরে আসে স্বস্থির নি:শ্বাস। তাই খালেদার বুধবারের সংবাদ সম্মেলন ইতিবাচক হওয়ায় তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মধ্যেও স্বস্থির নিঃস্বাস ফিরে এসেছে।

দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ তার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় যে তিক্ত অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে তা থেকে মুক্তি চায় মানুষ। তাই হিংসাত্মক কোন কর্মসূচি নির্বোধ বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরনের কর্মসূচি কোন দলের জন্য কখনো কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি।

গত আড়াই মাস ধরে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩০ জনের বেশি নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানী হয়েছে। অনেক মানুষ আগুনে পোড়ে এখনও বিভিন্ন মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। জনগণের সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে গত আড়াই মাসে দেশ অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এই ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কৌশল বিএনপি’র জন্য সফলতা বয়ে আনতে পারেনি।

বিএনপি’র এই ধরনের রাজনৈতিক কর্ম কৌশলের পরিবর্তন আশা করা হলেও দীর্ঘ আড়াই মাসে বেগম জিয়ার অবস্থানে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় নি। যে কারণে রাজনৈতিক এ অচলাবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিল দেশের সাধারণ মানুষ। সর্বপরি চরম অনিশ্চয়তার মুখে পতিত হয়েছিল দেশ।

এ অবস্থায় বিএনপি নেত্রীর বর্তমান কৌশল নি:সন্দেহে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তার কৌশল বিভিন্ন কারণে ইতিবাচক। প্রথমত: সহিংসতা হতে পারে এ ধরনের কর্মসূচি থেকে সরে এসেছেন তিনি। দ্বিতীয়ত: তার কর্মসূচি এখন আরো বেশি জনগণ নির্ভর। তিনি শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। যা তার দলের গত কয়েক মাসের কর্মসূচির চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

তাছাড়া শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি গত সরকারের দু:শাসনের বিষয়টি আরো পরিস্কারভাবে জনগণের মাঝে তুলে ধরতে পারবেন। গত ৫ বছরে সরকারের দূর্নীতি ও ব্যর্থতা জনগনের সামনে তুলের ধরার এটাই উত্তম উপায় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া তিনি আরো যে কারণে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য তা হলো তিনি যদি আবার অনির্দিষ্টকালের হরতাল বা অবরোধের মত কর্মসূচি ঘোষণা করতেন তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি অনিশ্চিত হয়ে পড়তো দেশের ভবিষ্যত।

এ অবস্থায় দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করে গণতন্ত্রের পথে যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ঘোষণা নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। আর তার এমন ঘোষণার ফলে সরকারেও দায়িত্ব হবে তার দলীয় কার্যক্রমে কোন রকম বাধা না দিয়ে বরং তাদের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সহায়তা করা। দলটির অধিকাংশ নেতার ঘাড়ে এখন ঝুলছে অনেক মামলার বুঝা।

এসব মামলার অধিকাংশই হয়েছে তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য। এ অবস্থায় তার দলের নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও নি:সন্দেহে তাদের রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। আর গণতন্ত্র রক্ষায় সবার জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হলে বিরোধী দলের নেতাদের জেলে রেখে তা সম্ভব নয়। সুতরাং এই সংস্কৃতির পরিবর্তন আসতে হবে।

অন্যদিকে, চলমান সংকট নিরসনে সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বেগম জিয়া যে সংলাপের আহবান জানিয়েছে, তাতে অবশ্যই সরকারের ইতিবাচক সাড়া দেয়া উচিত। কারণ গণতন্ত্র সুসংহত রাখতে হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই।