বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা :খালেদা বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতের প্রতি কড়া হুশিয়ারী দিয়েছেন। বিএনপির এখন আর জামায়াতের সহিসংতার দায়ভার নিবে না। সম্প্রতি খালেদা জামায়াতের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, জোটে থেকে রাজনীতি করতে হলে অবশ্যই তান্ডব, নৈরাজ্য ও সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।

জামায়াত-শিবিরের কোন সহিংসতা বা তান্ডবের দায়ভার বিএনপি আর নিবে না। কর্মসূচির নামে সহিংসতার ছাড়তে জামায়াতকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সোমবার রাতে ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াত নেতাকে এ কড়া হুশিয়ারি দেন। এছাড়াও জামায়াতের কাছে তার দলের দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে এ বার্তা পাঠিয়েছেন।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া জামায়াতকে পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন জোটে থেকে রাজনীতি করতে হলে অবশ্যই তান্ডব, নৈরাজ্য ও সহিংসতা ছাড়তে হবে। এদিকে, বুধবার হোটেল ওয়েস্টিনে জামায়াতের সঙ্গে সর্ম্পক ছিন্ন করবেন কী না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে যান বিএনপি নেত্রী।

তবে সূত্র বলেছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নকে একটি চাপ হিসেবেই দেখছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বৃহস্পতিবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও সরাসরি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে বিএনপির প্রতি পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন থেকেও জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে দলটিকে।

আর এসব চাপেই জাময়াতকে সহিংসতা ছাড়ার কড়া নির্দেশনা দিলেন খালেদা জিয়া। বিএনপি’র তৃণমূল থেকে উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীও বিষয়টি একইভাবে দেখছেন। তাদেরও দাবি, জামায়াত তার নিজস্ব ইস্যুতে সহিংসতা ঘটাছে। কিন্তু তার দায় নিতে হচ্ছে বিএনপিকে।

বিষয়টিতে জামায়াতের একাধিক নেতার বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। নির্বাহী পরিষদের দুই জন সদস্যের সঙ্গে কথা বললে তারা বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় নিজস্ব মতামত দিতে অস্বীকার করেন। তারা বলেন, এ বিষয়ে আরো দায়িত্বশীল নেতারা কথা বলবেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের কর্মপরিষদের একজন সদস্য আজকের বাংলাদেশ টোযেন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জোটগতভাবে আগামী কয়েকমাস রাজপথে কঠিন কোন কর্মসূচি আসছে না। তাই হয়তো খালেদা জিয়া এমন নির্দেশনা দিতে পারেন।

গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে পরের দিন বিএনপি নেত্রীকে জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে সংলাপের বসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আ’লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতা নির্বাচন পরিবর্তীতে বিভিন্ন সময় তাদের বক্তৃতায় বলেন, সহিংসতার ছেড়ে সংলাপে আসুন। না হয় এর দায়ে খালেদা জিয়াকে একদিন কাঠগড়ায় দাড়াঁতে হবে। সম্প্রতি দেশ ও বিদেশ থেকেও সহিংসতার পথ পরিহার করে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দিতে বিএনপি নেত্রীর প্রতি দাবি জানানো হয়।

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অষ্ট্রলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের যে বৈঠক হয় সেখানেও বিএনপিকে সহিংসতার পথ পরিহার করতে বলা হয়।

আন্দোলনের সময় সহিংসতা ও নাশকতা সম্পূর্ণ পরিহার করার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা। আন্দোলন চলাকালে সহিংসতা যেন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বৈঠকসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এমন বাস্তবতায় খালেদা জিয়া সহিংসতা কমাতে জামায়াতকে এ নির্দেশ দিলেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আ’লীগের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার গঠন করার পর এখন বিএনপিকে এ সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল জনমত গড়ে তুলতে হবে। সেটা করতে হলে সহিংসতা পথ পরিহার ছাড়া জনসমর্থন পাওয়া যায় না এটা এতো দিনে দল বুঝে গেছে। অন্যদিকে জামায়াতও খালেদা জিয়ার এ নির্দেশ মানতে সম্মত হয়েছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

তবে কেবল নির্দেশনার জন্যেই নয়, সহিংসতার দায় এককভাবে তাদের ওপর পড়ার কারণেও এই পথ থেকে সরছে জামায়াত। জামায়াত নেতাদের দাবি, পুরো সহিংতার দায় জামায়াতের ঘাড়ে চাপিয়ে বিএনপি থেকে তাদের আলাদা করতে চায়। এটা করতে পারলে বিএনপি ও জামায়াতকে আলাদাভাবে ঘায়েল করতে সুবিধা হবে। তাই আপাতত সরকারের হাতে কোন অস্ত্র তুলে দেবে না।

সহিংসতা করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করা যায় কিন্তু জনসমর্থন পাওয়া যায় না। সরকারের পতন ঘটাতে হলে দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে রাস্তায় না নামাতে পারলে আন্দোলন সফল হবে না, এমন উপলব্দিও রয়েছে জামায়াতের। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার এ নির্দেশ তাদের স্ট্রাইকিং ফোর্স শিবিরসহ দেশের সকল শাখায় এ সপ্তাহেই পৌছে দেওয়া হবে।