মারুফ মালেক,জীবননগর: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় চলতি মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং ক্ষেতে রোগবালাই আক্রমণ করতে না পারায় ফলন ভাল হয়েছে।

এদিকে আগাম জাতের আলু বাজারে আসতে না আসতেই দরপতন শুরু হওয়ায় বাম্পার ফলনেও কৃষকদের মুখে হাসি নেই। ফলে গত বছরের মত এবারও আলু চাষীরা লোকসান আতংকে ভূগছেন।

এলাকার চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,গত বছরের লোকসান পুঁষিয়ে নিতে কৃষকেরা জমির আমন ধান কাটার সাথে সাথে জমিতে আগাম জাতের আলু আবাদ শুরু করেন। মৌসুমের শুরুতেই আলু বীজের দাম ছিল বেশী।

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে সার সংকট সৃষ্টি হওয়ায় বেশী দামে সারও কিনতে হয়েছে। গত মৌসুমে সারা বছর আলুর ভাল দাম পাওয়া না গেলেও শেষের দিকে দাম ওঠায় চাষীরা আলুর দাম নিয়ে আশার আলো দেখতে থাকেন।

কিন্তু গত বছরের মতো এবারও আলু উত্তোলনের শুরুতেই দাম না পাওয়ায় আলু চাষীদের মুখ মলিন হয়ে উঠেছে। জীবননগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়,চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু উপজেলায় এ বছর আলুর আবাদ হয়েছে ৪৫০ হেক্টর জমিতে।

উপজেলার আলু চাষীরা গত বছর আলুর ভাল দাম না পাওয়ায় এবছর আলুর আবাদ কম হয়েছে।   উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুন্সী আব্দুস সালেক জানান,চলতি বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং ক্ষেতে রোগবালাই আক্রমণ করতে না পারায় আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে।

ইতিমধ্যেই আগাম জাতের আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। মাঠের সমস্ত আলু উত্তোলন শুরু হতে আরো ২০-২৫ দিন সময় লাগবে। মৌসুমের শুরুতেই আলুর দরপতন হওয়ায় চাষীদের মধ্যে লোকসান আতংক কাজ করছে। মিনাজপুর গ্রামের আলু চাষী মসলেম উদ্দিন,শফিকুল ও ডা.আয়ুব আলী জানান,গত বছর প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে ক্ষেতে রোগ বালাই বৃদ্ধি পায় ফলে উৎপাদন কম হয়। অন্যদিকে আলুর দামও কম ছিল।

তবে চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভাল থাকায় কোন রোগবালাই আক্রমন করতে না পারায় আলুর বাম্পার ফলন হচ্ছে। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও উৎপাদনের শুরুতেই দরপতন শুরু হওয়ায় লোকসানের সম্ভবনা রয়েছে। একই গ্রামের আলু চাষী আরিফুল ইসলাম জানান,চলতি বছর আমার দু’বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলুর আবাদ রয়েছে। ওই একই জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করার জন্য আলু উত্তোলন শুরু করেছি।

আগাম জাতের এ আলু বিঘা প্রতি ৭৫-৮০ মণ হারে হলেও পাইকারী বাজারে প্রতি মণ আলু ৪০০-৪৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান বাজার দরে প্রতি বিঘা আলুতে ৪০০০-৬০০০ টাকা লোকসান গুনতে হবে। অন্যদিকে প্রতিদিনই আলুর দরপতন হচ্ছে। এ অবস্থায় তার আশঙ্কা এ বছরও আলু চাষে লোকসান গুনতে হবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সালমা জাহান নিপা জানান,চলতি বছর উপজেলায় আলু চাষের জন্য অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করায় এবং শেষ পর্যন্ত কোন রোগবালাই আক্রমণ করতে না পারায় চাষীদের আলুর আবাদ নিয়ে বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হয়নি।

অন্যদিকে আলু বাম্পার ফলনে তারা অত্যন্ত খুশি ছিল। কিন্তু তাদের সে খুশি দিনে দিনে ফিকে হয়ে আসছে উত্তোলনের শুরুতেই বাজারে আলুর দরপতনে। তারপরও চাষীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দেশের অভূত পরিস্থিতির কারণে দরপতন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশ স্বাভাবিক হলেই সমস্যার সমাধান হবে তার বিশ্বাস।