বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ
আসিফুজ্জামান পৃথিল, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। ব্যাংক, আর্থিক ও প্রকৌশল খাতের পর বর্তমানে পুঁজিবাজারে শক্তিশালী খাত হিসাবে পরিচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত। চলতি বছরে এ খাতের ১৮টি কোম্পানির মধ্যে ১২টি কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়লেও ৪ টি কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর জুন ক্লোজিং এর প্রভাব পড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগেও। তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে মানে এ খাতের কোম্পানিগুলো ভাল পারফর্ম করছে বাজারে।
তারা আরও বলেন, ব্যবসায় ইতিবাচক অবস্থা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি দেশের বাজারে তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো আগের তুলনায় আরও বেশি ভাল করার সুযোগ পাচ্ছে, যার কারনে এদের অবস্থা দিন দিন ভাল হচ্ছে।
তবে জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতের সিংহভাগ কোম্পানি বড় মূলধনী হলেও ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের তুলনায় এ খাতের মাত্র কয়েকটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। ফলে এ খাতের প্রতি সাধারন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী আকর্ষণও বাড়ছে।
তাছাড়া এ খাতের কোম্পানিগুলো শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০০ শতাংশ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। যার কারণে বিনিয়োগকারীরা এ খাতে আকৃষ্ট হয়ে থাকে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ৩১ জুলাই’ হতে ৩১’ আগস্ট পর্যন্ত বিনিয়োগ বিশ্লেষণ করে এসকল কোম্পানির তথ্য জানা গেছে।
তালিকাভুক্ত যেকোন কোম্পানিতে মোট ৫ ধরণের শেয়ার থাকে। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার, সরকারের হাতে থাকা শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মিউচুয়াল ফান্ড, স্টক হোল্ডার এবং বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকেই একত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলে বিবেচনা করা হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যেহেতু বড় ধরণের বিনিয়োগ করে থাকেন তাই তাঁরা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেই যেকোন শেয়ার কেনাবেচা করে থাকেন। তাই তাঁদের বিনিয়োগের পরিমাণ দেখে অনেক সাধারন বিনিয়োগকারী সংশ্লিষ্ট শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকেন।
জুলাই মাসের শেষ দিনের তুলনায় আগস্ট মাসে জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ১২টি কোম্পানিতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ৪টি কোম্পানিতে। আর দুইটি কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে কোন পরিবর্তন আসেনি।
যে ১২টি কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে সেগুলো হলো, বারাকা পাওয়ার লিমিটেড, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেড, ইস্টার্ণ লুব্রিকেন্টস লিমিটেড, জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড, যমুনা অয়েল লিমিটেড,
খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, লিন্ডে (বাংলাদেশ) লিমিটেড, এমজেএল (বাংলাদেশ) লিমিটেড, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশান কোম্পানি লিমিটেড।
যে ৪টি কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে সেগুলো হলো, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড, ডরিন পাওয়ার জেনারেশান অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং তিতাস গ্যাস। বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডস লিমিটেড এবং সামিট পাওয়ার লিমিটেডে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে কোন তারতম্য আসেনি।
বারাকা পাওয়ার লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ১৭.৫৪ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯.৬০ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ২.০৬ শতাংশ।
সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ১৭.২৯ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭.৬২ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.৩৩ শতাংশ।
ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ২০.২৮ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা কমে দাঁড়ায় ২০.২৫ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.০৩ শতাংশ।
ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ৭.২৭ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা কমে দাঁড়ায় ৬.৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.২৮ শতাংশ।
ইস্টার্ণ লুব্রিকেন্টস লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ২৫.৩৭ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫.৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.১৯ শতাংশ।
জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ২৫.৩৭ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫.৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.১৯ শতাংশ।
যমুনা অয়েল লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ২২.০৯ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২.১৭ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.০৮ শতাংশ।
খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ১৪.৮৩ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫.২০ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.৩৭ শতাংশ।
লিন্ডে (বাংলাদেশ) লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ২৮.৯০ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯.০০ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.১০ শতাংশ।
এমজেএল (বাংলাদেশ) লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ১১.৮০ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২.৭১ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.৯১ শতাংশ।
মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ৩১.৫২ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১.৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.০৩ শতাংশ।
পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ৩২.৪১ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২.৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.৪৫ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ১৮.৭০ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮.৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.০৮ শতাংশ।
ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশান কোম্পানি লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ০.৩২ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা বেড়ে দাঁড়ায় ০.৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ০.০৪ শতাংশ।
শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ১২.৮৭ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা কমে দাঁড়ায় ১২.৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.২৯ শতাংশ।
তিতাস গ্যাস : ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই’ কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের পরিমাণ ছিলো ১৩.৭১ শতাংশ। ৩১ আগস্ট’ তা কমে দাঁড়ায় ১৩.৬২ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে ০.০৯ শতাংশ।