DU movement_pic1দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফটকের তালা ও কলাপসিবল গেট ভেঙে উপাচার্যকে লাঞ্ছিতের বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। এর নেপথ্যে নায়কদের খুঁজে বের করতে অনুসন্ধানে নেমেছে তারা। এ ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারও কঠোর অবস্থানে। তারা মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হলে পুরো দেশে এর প্রভাব পড়বে। এজন্য অংকুরেই ‘ষড়যন্ত্র’ বিনাশ করতে চায় তারা।

রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের মতো ছাত্রলীগও বাম সংগঠনগুলোকে জায়গা দিয়ে আসছে। নানা সময়ে দাবি নিয়ে বাম সংগঠনগুলো সোচ্চার হলেও শান্তিপূর্ণ পন্থাই তাদের দেখা গেছে। হুট করে কেন তারা সহিংসতায় জড়ালো সে হিসেব মেলাতে ব্যস্ত ক্ষমতাসীনরা। তাদের ধারণা, এখানে অন্য কোনো ইন্ধন থাকতে পারে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগও বলছে, এই আন্দোলন শুধু বামদের নয়, অন্যরাও এতে জড়িয়েছে। এখানে ‘ভিসির চেয়ার’ নিয়ে দ্বন্দ্বের ইন্ধন আছে কি না- এমন প্রশ্নও উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, এ ধরনের সহিংস কার্যক্রম পূর্বপরিকল্পিত। আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক ধারাবাহিক কার্যক্রমের আরও একটি বড় ধরনের অপপ্রয়াস। এজন্য জড়িতদের খুঁজে বের করতে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে।

এবিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘মঙ্গলবারের আন্দোলন শুধু বামদের নয়। এখানে ছাত্রদল-শিবিরও জড়িত। কারণ, এর আগে কখনো এভাবে মারমুখী কার্যকলাপে জড়ায়নি বাম সংগঠনগুলো।’

তার দাবি, মঙ্গলবার কার্যালয় ভাঙচুর করে উপাচার্যকে লাঞ্ছনার পাশাপাশি উদ্ধার করতে গেলে ছাত্রলীগের উপরও চড়াও হয়েছে তারা। আমাদের ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নাশকতার এমন স্পর্ধা শিবির-ছাত্রদল ছাড়া কারো হতে পারে না।

এই আন্দোলনের নেপথ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অস্থির করার কোনো ষড়যন্ত্র কি না- খতিয়ে দেখার পরামর্শ ছাত্রলীগ সভাপতির। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশকে যারা নষ্ট করতে চায়, তাদেরকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনাসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

এবিষয়ে কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ সরকারও। দলটির নেতা ও মন্ত্রীরা বলছেন, আন্দোলনের নামে এ ধরনের ভাঙচুর, নাশকতা বা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে ছাড় নয়। এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে অধিভুক্ত কলেজ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কার, প্রক্টরের পদত্যাগ, শিক্ষার্থীদের নামে দেয়া মামলা প্রত্যাহার এবং তদন্ত কমিটিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি রাখার দাবিতে ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থী’রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করে।

এসময় তারা উপাচার্যের কার্যালয়ের তিনটি গেট ভাঙচুর করে। ছবিতে দেখা যায়, তারা হেক্সো ব্লেড, রড, লোহার পাইপ, ইট, পাথর দিয়ে পিটিয়ে গেটের তালা, কলাপসিবল গেট ভাঙচুর করে ভিসি কার্যালয়ে প্রবেশ করে।

এসময় উপাচার্য তার পূর্বনির্ধারিত মিটিংয়ে যোগ দিতে চাইলে বাধা দেয় আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে ঘিরে ধরে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. আক্তারুজ্জামানকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় তানভীর আহম্মেদ মুইন নামে ছাত্র ইউনিয়নের এক কর্মী। এছাড়া উপাচার্যকে নিয়ে টানাহেঁচড়া, ধাক্কাধাক্কিও করেছে বাম সংগঠনগুলোর কিছু নেতাকর্মী। বাম সংগঠনের এক নারী কর্মীর বিরুদ্ধে উপাচার্যের শার্টের কলার চেপে ধরারও অভিযোগ করেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।

খবর পেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে উপাচার্যকে উদ্ধার করেন। পরে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে রেজিস্ট্রার ভবন এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসময় কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন। আহতদের ২০ জনকে নিজেদের কর্মী দাবি করেছে ছাত্রলীগ।

সংঘর্ষের কারণে উদ্ধারকারী ছাত্রলীগকে অনেকে দোষারোপ করলেও সরকার ও দলের নেতারা তাদের পক্ষেই রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ভিসির অফিসের গেট ভেঙে ঢোকার কি কোনো নিয়ম আছে? এটা কি কোনো গণতান্ত্রিক পন্থা, এটা কি আন্দোলনের অংশ?

তিনি বলেন, ‘ভিসি আমাকে বলেছেন- কলাপসিবল গেট ভেঙে যেভাবে অ্যাটাক করা হয়েছে, ছাত্রলীগের ছেলে-মেয়েরা যদি এসে উদ্ধার না করতো, তাহলে তার জীবনের উপর হামলার আশঙ্কা থাকতো।’

‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা উপাচার্যের কার্যালয়ের ফটক ভেঙেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মনে করে সরকারের এই প্রভাবশালী মন্ত্রী।

এ বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি আদায়ে আন্দোলন করছে। এ ব্যাপারে ঢাবি কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। এ ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে নাশকতা চালানো হলে বা কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ চালানো হলে তা বরদাশত করা হবে না। যে বা যারাই ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে মঙ্গলবারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, উপাচার্যের প্রতি বলপ্রয়োগ ও আক্রমণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রক্টোলিয়াল বডির সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা মানববলয় তৈরি করে উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে ফিরিয়ে আনেন।

এ ধরনের সহিংস কার্যক্রম পূর্বপরিকল্পিত। এটি আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক ধারাবাহিক কার্যক্রমের আরও একটি বড় ধরনের অপপ্রয়াস বলে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে বলতে চায় যে, যেকোনো নিপীড়নমূলক, সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড যারাই ঘটাক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।