kobir-20180129150856দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঘোষিত হলো চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি। ঘোষিত মুদ্রানীতি কেমন হবে, বিনিয়োগবান্ধব হবে কি না এ নিয়ে কয়েক দিন যাবতই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাজার সংশ্লিষ্টরা ঘোষিত মুদ্রানীতেকে পুঁজিবাজারবান্ধব হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। তিনি জানান, নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে জুন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ও সরকারি খাতে কমিয়ে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণ বিতরণে শৃঙ্খলা পরিপালনে বাধ্যবাধকতা কঠোরতর করা হবে।

যদিও মুদ্রানীতি পুঁজিবাজারে নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে আশ্বস্ত করেছিলেন অর্থনীতিবিদ ও বাজারসংশ্লিষ্টরা। কিন্তু তারপরও জুজুর ভয় থেকে কিছুতেই যেন মুক্ত হতে পারেনি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

তবে আজ ঘোষিত মুদ্রানীতির পর সেই আতঙ্ক কেটে গেছে। কেননা ঘোষণার আগে যতই সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কথা বলা হোক না কেন? হয়েছে তার উল্টো! যা পুঁজিবাজারের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইস্যুরেন্সের বিভাগের অধ্যাপক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে যত প্রকার সংকোচন নীতির কথা বলা হলেও মূলত প্রসারণশীল নীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি নির্বাচনী বছরকে সামনে রেখে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সরকারি খাতে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে অর্থনীতিবিদদের এমন মতামতকে ‘সমর্থন’ করেই ঋণ প্রবাহের সীমাটা না কমিয়ে উল্টো বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

একই সঙ্গে ঋণ বিতরণে শৃঙ্খলা পরিপালনে বাধ্যবাধকতা কঠোরতর করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে অগ্রাসী ঋণপ্রদানের হারও অনেকটা কমে যাবে। যা পুঁজিবাজারের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করছেন তিনি।

ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট মোস্তাক আহমেদ ছাদেক বলেন, মুদ্রানীতিতে এডি রেশিও কামানো নিয়ে বাজারে যত ধরনের গুজব থাকুক না কেন, সে স্কোপ বাদ দিয়ে প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি হয়েছে। মুদ্রানীতিটি বাজারের জন্য দারুন হয়েছে আশা করা যায় পুঁজিবাজারের জন্য তা সুফল বয়ে আনবে।

অন্যদিকে নতুন মুদ্রানীতিতে জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। যা আগে প্রথমার্ধে ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ। আগে ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

মুদ্রানীতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাজারের তত্বাবধানে কাজ করছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ব্যাংক এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ কার্যক্রম জোরালো পর্যবেক্ষণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাতে পুঁজিবাজারে মূল ব্যাংকের বিনিয়োগ আইনি সীমা (এক্সপোজার লিমিট) অতিক্রম না করে।

এতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ আইনি সীমার মধ্যে রয়েছে। তাই পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এছাড়া প্রবাসি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি বাজারের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। তাছাড়া দেশের ম্যাক্রোইকনোমিক আউটলুক ভাল থাকায় বাজারের প্রতি আস্থা বেড়েছে।

এদিকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজারের অবদান বেড়েছে। অনেক নন-ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ঋণ এড়িয়ে বন্ডের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। যা বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের পাশাপাশি ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমের উন্নয়নে ভারসাম্য রাখছে।

মুদ্রনীতি প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারের মূল্য সূচক ডিএসইএক্স জুন, ২০১৭ থেকে ১০ শতাংশ এবং ডিসেম্বর, ২০১৬ থেকে ২৪ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে পুঁজিবাজারের মূল্য সূচকে এমন ঊর্ধ্বমূখী ভাব দেখা গেছে। দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ ৩গুণ বেড়ে যাওয়ায় এমন ভাব লক্ষ্য করা গেছে।