দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, শর্ত পরিপালনে বিলম্ব করার কারনে অনেক কোম্পানির আইপিও পেতে অপেক্ষা করতে হয়। যেমন এসটিএস হোল্ডিংস গত ৯ মাস ধরে বিভিন্ন কোয়ারির জবাব দেয় না, এনার্জিপ্যাকের সিআইবি ক্লিয়ার না। এমন সমস্যা অনেক কোম্পানির রয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা আইপিও’র অনুমোদন দিতে পারি না। যে কারনে অনেক কোম্পানির আইপিও পেতে বিলম্ব হয়।

শর্ত পরিপালন হলে দ্রুত প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এর আগে দ্রুত শর্ত পরিপালনের কারনে এক-দেড় মাসের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন দেওয়ার রেকর্ড আছে। আবার শর্ত পরিপালনে ব্যর্থতার কারনে অনেক কোম্পানির আইপিও বাতিলও করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর ফারস হোটেলে বিজনেস আওয়ার টোয়েন্টিফোর ডটকম ও ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত ‘দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে শেয়ারবাজারের গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিবিএ’র সভাপতি শাকিল রিজভী।

খায়রুল হোসেন বলেন, এখনো প্রত্যেকটি কোম্পানির আইপিওতে কয়েকগুণ আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু তারপরেও আইপিও’র সংখ্যা বাড়াতে গেলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারন শেয়ারবাজারে লেনদেনের পরিমাণ কমের কম। এছাড়া আইপিও বেশি দিতে গেলেই নানা জায়গা থেকে অভিযোগ আসে। যা আইপিও কম দেওয়ার একটি কারন। যাতে সুযোগ থাকলেও ২০১৭ সালে তুলনামূলক কম আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, সব কোম্পানিরই শেয়ারবাজারে আসার অধিকার রয়েছে। তবে আইন পরিপালন করেনি এমন একটি কোম্পানিকেও আইপিও দেওয়া হয় না। কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পরে কোন কোম্পানি খারাপ করলেই নানা ধরনের সমালোচনা করা হয়।

এছাড়া ১০ বছর পরে একটি কোম্পানির পারফরমেন্স কেমন হবে, তা এখনই আমাদের পক্ষে ভবিষ্যৎ বাণী করা সম্ভব না। যে কারনে পৃথীবির অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও কিছু কোম্পানি নিয়ে দূর্ঘটনা ঘটে। তবে আইপিওকালীন কোন সমস্যা আছে কিনা, সেটা দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে একটি কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের আগে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে যাছাই-বাছাই করা হয় বলে জানান খায়রুল হোসেন। যার ভিত্তিতে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ কমিশনে মতামত প্রদান করে। তবে ভবিষ্যতে কোয়ালিফাইড লোকজন দিয়ে কোম্পানির বিভিন্ন তথ্য যাছাই-বাছাই করার জন্য ডিএসইকে আহবান করেন তিনি।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ২০১০-১১ সালে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ দেখেছি। অথচ ওইসময় বিভিন্ন কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের পোর্টফোলিওতে শেয়ার শূন্যও ছিল। এ জাতীয় কোম্পানিতে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের কোম্পানির প্রতি দরদ কম থাকে। যে কারনে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের এককভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে ওই নির্দেশনার সংজ্ঞার কিছু বিষয়ে নিকট ভবিষ্যতে পরিস্কার করা হবে।

সর্ম্পক্যের ভিত্তিতে কমিশন প্রিমিয়াম দেয় এমন গুজব ছিল বলে জানান খায়রুল হোসেন। যাতে পরবর্তীতে সংশোধন করে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা দর নির্ধারন করে। যেখানে কমিশনের কিছু করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে সঠিক দর নির্ধারনে যোগ্য বিনিয়োগকারীদেরকে সচেতন হতে হবে।

পরীক্ষামূলকভাবে এরইমধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা নিলামে যে দর প্রস্তাব করবেন, সেই দরে শেয়ার করতে হবে এমন আইন স্মল ক্যাপিটাল মার্কেটে চালু করা হয়েছে বলে যোগ করেন তিনি। যেখানে কাট-অফ প্রাইসের উপরে দর প্রস্তাবকারীদেরকে প্রস্তাবিত দরেই শেয়ার নিতে হবে। যেটা পরবর্তীতে মূল মার্কেটে চালু করা হবে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, সুশাষণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে, শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা হবে না। যা নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাষণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এছড়া শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে প্যানেল অডিটরস ও ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন গঠন করা হয়েছে।

একসময় প্লেসমেন্টের বিশাল বাজার ছিল বলে জানান খায়রুল হোসেন। তবে সেটা বন্ধ করে একটি কোম্পানির প্লেসমেন্ট ১০০ জনে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। তারপরেও প্লেসমেন্ট নিয়ে আরও কাজ করা হচ্ছে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, উদ্যোক্তারা এক বছর পরেই বোনাস শেয়ার বিক্রয় করে দিতে চায়। তারপরেও বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় বোনাস শেয়ার প্রত্যাশা করে। যেটা দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানির জন্য খারাপ। তাই উদ্যোক্তাদের বোনাস শেয়ার বিক্রয়ে লক ইন নিয়ে কমিশন কাজ করছে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ দরকার। যাতে একটি শ্রেণী নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ ফেরতের নিশ্চয়তা পায়। শুধুমাত্র আজকে এই শেয়ার বাড়বে, তো কালকে ওই শেয়ারের দাম বাড়বে-তার উপর ভিত্তি করে লেনদেনের মাধ্যমে শেয়ারবাজার এগোতে পারবে না।

সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, প্যানেল আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো: ছায়েদুর রহমান ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি হাসান ঈমাম রুবেল উপস্থিত ছিলেন।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিটিভি’র প্রধান প্রতিবেদক রাজু আহমেদ।আর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিজনেস আওয়ার টোয়েন্টিফোর ডটকমের উপদেষ্টা ও ওমেরা অয়েলের সিইও আক্তার হোসেন সান্নামাত।