বিশেষ প্রতিনিধি, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১৯-২০ অর্থবছরের নতুন বাজেটে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সংস্কারমূলক দিক নির্দেশনা ও একগুচ্ছ প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।

ডিএসই কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, সরকারের ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যে সমস্ত প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তাতে বাজারে অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং জাতীয় অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। বেসরকারী খাত আরও শক্তিশালী ও বিকশিত হয়ে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যা দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি আকৃষ্ট করবে।

তাছাড়া প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক মনে করছেন বেশিরভাগ বিশ্লেষক। তাদের মতে, বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই বাজার বিকাশে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে লভ্যাংশ আয়ে করমুক্ত সীমা বাড়ানো, বিদেশীদের জন্যেও লভ্যাংশ আয়ে দ্বৈতকর পরিহার, দুর্বল কোম্পানি অধিগ্রহণে বিশেষ বিনিয়োগ-সুবিধা প্রদানসহ কিছু প্রস্তাব পুঁজিবাজারে খুবই তবে প্রভাব ফেলবে।

তবে রিজার্ভ ও অবণ্টিত মুনাফার (জবঃধরহ ঊধৎহরহমং) এর উপর কর আরোপের প্রস্তাবটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কেউ কেউ এটিকে ইতিবাচক মনে করছেন, আবার অন্যরা মনে করছেন এর ফলে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত হতে পারে।

উল্লেখ, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন। তাতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি পুঁজিবাজারের জন্যেও নানা প্রস্তাবনা রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেছেন, একটি শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার।

একটি দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী সেই দেশের পুঁজিবাজারটিও স্বাভাবিক নিয়মে তত শক্তিশালী হবে। আমরা যেমন চাই আমাদের দেশের জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনীতি, ঠিক তেমনইভাবে আমরা দেখতে চাই একটি বিকশিত পুঁজিবাজার।

পুঁজিবাজারে লভ্যাংশের উপর থেকে দ্বৈত কর প্রত্যাহারের দাবী দীর্ঘ দিনের। চলতি বছরের বাজেটে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয়ে দ্বৈতকর প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আজকে আগামী অর্থবছরে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয়ের উপর থেকেও দ্বৈতকর প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুর্বল আর্থিক অবস্থার কোম্পানিকে ভালো আর্থিক অবস্থার কোম্পানি অধিগ্রহণ করলে ইবিশেষ বিনিয়োগ সুবিধা (ওহাবংঃসবহঃ অষষড়ধিহপব) দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে.এ.এম মাজেদুর রহমান বলেছেন, সরকারের ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যে সমস্ত প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তাতে বাজারে অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং জাতীয় অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করবে। অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজার বান্ধব বাজেট ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে পুঁজিবাজার অত্যন্ত শক্তিশালী।

ভবিষ্যতে ২০১০ সালের মতো ধসের ঘটনা ঘটবে না। বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যেসব সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে এতে বাজারে অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। বেসরকারি খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা তাদের কোম্পানির জন্য পুঁজিবাজারে তালিকা ভুক্তিতে আগ্রহী হবে। এতে শিল্প খাত শক্তিশালী ও বিকশিত হয়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বেশি আকৃষ্ট করবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক মোঃ রকিবুর রহমান আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে যুগান্তকারী বাজেট হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এই বাজেট পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে; বাজারের চেহারা বদলে দেবে।

তিনি আরো বলেন, বাজেটে লভ্যাংশ আয়ে করমুক্ত সীমা বাড়ানো, দ্বৈতকর অবসানসহ যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে, তার সবগুলোই বাজারের জন্য ইতিবাচক। যুগান্তকারী এই বাজেট পুঁজিবাজারকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে পুঁজিবাজারের গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে ব্যাংকের পরিবর্তে পুঁজবাজারকে কাজে লাগানোর কথা বলেছেন। এটি বাস্তায়িত হলে পুঁজিবাজারের আকার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এই বাজার অর্থনীতিতে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এর সভাপতি মোঃ শাকিল রিজভী বলেন, দেশের ইতিহাসে কোনো সরকার এই প্রথম পুঁজিবাজারকে গুরুত্বারোপ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারের জন্য যে সংস্কারের প্রস্তাবনা বাজেটে দিয়েছে তা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এজন্য ডিবিএর পক্ষ থেকে অভিনন্দন।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার সংস্কারের প্রস্তাবনার মাধ্যমে বুঝা যায় দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। লভ্যাংশ আয়ে করমুক্ত সীমা বাড়িয়ে সাধারন বিনিয়োগকারীদের উতসাহিত করা হয়েছে। অপরদিকে বোনাসের চেয়ে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাবনার মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগকারীদের উতসাহ দেয়া হয়েছে। এতে বাজার টেকসই গতি ফিরে পাবে বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব হোসেন মজুমদার বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার সংস্কারে যেসব প্রণোদনা ঘোষণা করেছে তাতে বুঝা যাচ্ছে বাজারের প্রতি সরকারের আগ্রহ রয়েছে।

যদি সংস্কার কার্যত বহাল থাকে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে পুঁজিবাজারে প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়লে তো বাজার ভালো থাকবে।

যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি বাজেটে বোনাস শেয়ারকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে নগদ লভ্যাংশকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এগুলো বাজারের জন্য এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক দিক। যা বাজারে সুফল বয়ে আনবে।