শিপ্রাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের নিহতের এক সপ্তাহ পর জাস্ট গো নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। আপলোড হওয়া ভিডিওটির পর নতুন করে আবার আলোচনায় এসেছেন সিনহার সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথ।
উপকূলীয় এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা, ৮০ কিমি বেগে ঝড়
শিপ্রার পরিবার বলছে, ভিডিও আপলোডের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে একটি গ্রুপ শিপ্রার চরিত্রহননের চেষ্টা করছে। তারা শিপ্রার পুরোনো ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করে নানা রকম মন্তব্য করছে। তাকে স্বার্থপর হিসেবে সমাজের চোখে পরিচয় করে দিচ্ছে। এছাড়াও জার্মানিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিপ্রা দেবনাথ যেভাবে হত্যার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
শিপ্রা মেজর (অব) সিনহা হত্যার বিচার না চেয়ে ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার চাইলে- তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। যদি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলারই না থাকে তবে তিনি কেন লাইভে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলেন, এমন প্রশ্নেরও অবতারণা ঘটেছে। এছাড়া ‘মেজর (অব) সিনহা কীভাবে তার কাছ থেকে ক্যামেরা চালানো শিখেছেন’ সেসবের বর্ণনাও এমন পরিস্থিতে সমীচীন হয়নি বলে অনেকে মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল তার ফেসবুক পেইজে একটি স্ট্যাটাসে বলেন, ‘মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডের পর শিপ্রা দেবনাথের একটি ভিডিও দেখে হতভম্ব হয়ে গেছি। মনে হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার হত্যার বিচার না, শিপ্রার আসল চিন্তা ইউটিউব চ্যানেলের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। মেয়েটি সেখানে যেভাবে বলল সিনহা ‘মারা গেছে’ মনে হলো যেন তাকে কেউ হত্যা করেনি, পাহাড়-টাহার থেকে দুর্ঘটনাবশত পড়ে মৃত্যুটি ঘটেছে!
তার সাথে সিনহার যতো অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকুক না কেন, পাবলিকলি সে যেভাবে সিনহা, সিনহা বলে তাকে উল্লখ করেছে তা অত্যন্ত অরুচিকর লেগেছে আমার কাছে। আর এত ঘনিষ্ঠ যদি হয় তাদের সম্পর্ক, তাহলে তার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর শিপ্রার আচার-আচরণ তো সন্দেহজনক বলতে হবে!
পুরো ভিডিওটা দেখে আমি এমন বিরক্ত হয়েছি যে তা বলার মতো না। কি দুর্ভাগ্য, মেজর সিনহা এমন একটা আজব সহকর্মী রেখে গেছেন তার সম্পর্কে বলার জন্য।’ সাবেক সেনা কর্মকর্তা শহীদ খান ফেসবুকে লিখেন, ‘ঘটনার দিন তিনি কেন সিনহার সাথে যাননি? তাকে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল? কেন তিনি মিডিয়াতে সিনহা হত্যার বিচার চাইছেন না, বরং নিজেকে তারকা হতে প্রচার করছেন কেন? সিনহা ছাড়া শিপ্রা কী এবং সে আসলে কে?’
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর লিখেন, ‘তোমাদেরকে সেলেব্রিটি বানানোর জন্য আমরা রাজপথে নামিনি, বরগুনায় আমার ভাই-বোনেরা প্রদীপ, লিয়াকতদের উত্তরসূরীদের লাঠিপেটা খায়নি, একজন এসআই চড় খায়নি। নেমেছিলাম সত্য উদঘাটনে। আমাদের মতো প্রতিবাদী মানুষগুলো রাজপথে না নামলে তোমাদেরকে মামলার আসামি হয়েই কারাগারে থাকা লাগতো মাস, বছর, অধিকন্তু হয়রানি।
ভেবেছিলাম তোমরা মুক্ত হলে আমরা সত্য উদঘাটনে যে সংগ্রামে নেমেছি সেটি সহজ হবে। কিন্তু তোমাদের ভূমিকা শুধু আমাকে, আমাদেরকে নয়, পুরো জাতিকেই হতাশ করছে। তোমাদের পাশে পুরো জাতি ছিল, তোমরা বুঝলে না! তোমরা চাইলে জাতির কাছে সৎ-সাহসী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন বীর হিসেবে নিজেদেরকে তুলে ধরে সম্মানিত হতে পারতে। কিন্তু মনে হচ্ছে ওদের ভয়ে তোমরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছো! যা আমাদেরকে সাময়িক পীড়া দিলেও পরবর্তীতে তোমাদের জন্যই বিপদের কারণ হবে।
কারণ ওরা হয়তো এখন ওদের প্রয়োজনে তোমাদেরকে সত্য না বলার জন্য চাপ দিচ্ছে, পাশে থাকবে বলছে, প্রলোভন দেখাচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজন শেষে ওরাই তোমাদেরকে বিপদে ফেলবে। তাই সময় থাকতে তোমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। কারণ, পরবর্তীতে বিপদে পড়লে কাউকে পাশে নাও পেতে পারো।’
এদিকে শিপ্রার এমন বক্তব্য দেয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিপ্রার ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন সময়ের ছবি ফেসবুকে আপলোড করা হয়। এসব ছবির ক্যাপশন ও কমেন্ট সেকশনে তাকে প্রকাশের অযোগ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এসব পোস্টের কোন কোনটিতে শিপ্রার পোশাক নিয়ে ঋণাত্বক মন্তব্য করা হয়েছে, কোথাও বা তার ধূমপানের ছবি আপলোড করে চলেছে সমালোচনা।